ভারতের কলকাতায় বাংলাদেশি পর্যটক তলানিতে নেমে যাওয়ায় বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন স্থানীয় ছোট-বড় ও মাঝারি সব ধরনের ব্যবসায়ী। আবাসিক হোটেল, খাবারের দোকান, ট্যাক্সি চালকদের চোখে-মুখেও নেমে এসেছে অন্ধকার।
একইভাবে মেডিকেল ভিসা সীমিত করায় চেন্নাই, ব্যাঙ্গালুর, দিল্লীর বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশি রোগির সংখ্যা অনেকাংশে কমে গেছে। হাসপাতালগুলো আশপাশের এলাকায় ভাড়াটিয়ার অভাবে বাড়িগুলো শূন্য পড়ে আছে।
একইসাথে ফলমূলসহ খাবারের দোকানগুলোতে ক্রেতা নেই বললেই চলে। এসব নিয়ে ভারতের বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রতিবেদনও প্রকাশিত ও প্রচারিত হচ্ছে। বিশেষ করে ইউটিউব চ্যানেলগুলোতে ক্ষোভ ও হতাশার কথা জানাচ্ছেন ভারতের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারি হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ঢাকা-নয়াদিল্লি ‘শীতল সম্পর্ক’র জেরে পর্যটক ভিসা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। এতে জরুরি কাজে দেশটিতে যেতে না পারে বাংলাদেশি পর্যটকরাও পড়েছেন বিড়ম্বনায়।
কলকাতার অধিবাসীরা জানায়, প্রতি বছর অক্টোবর থেকে মধ্য জানুয়ারি প্রায় চার মাস কলকাতার নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীরা বছরের সেরা সময় পার করেন। অন্য রাজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকেও আসেন পর্যটকরা। তবে বহু বছরের চিরাচরিত এ চিত্র এবার পাল্টে গেছে ঢাকা-দিল্লির শীতল সম্পর্কের জেরে।
স্থানীয়রা জানায়, বাংলাদেশিদের গত আগষ্টের পর থেকে পর্যটক ভিসা দেয়া বন্ধ রেখেছে ভারত। আর যারা এর আগে ভিসা করেছেন, তাদের ছয় মাসের ভিসার মেয়াদ শেষ হবে ডিসেম্বরে। কলকাতার মার্কেট বা হোটেল পাড়ায় যে ক’জন বাংলাদেশি পর্যটককে দেখা যাচ্ছে, তাদের বেশিরভাগেরই ভিসা ইস্যু হয়েছে জুলাইয়ে।
পর্যটক খরায় হোটেল-বিপণীবিতানের মতো কলকাতা-ঢাকা রুটে সরকারি-বেসরকারি পরিষেবাও প্রায় বন্ধের মুখে। এ নিয়ে কলকাতার ব্যবসায়ীরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা বিভিন্ন মিডিয়ায় দেয়া সাক্ষাৎকারে জানান, এবার দূর্গাপুজায়ও তারা কাঙ্খিত ব্যবসা করতে পারেন নি। বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী জানুয়ারিতে কলকাতা বাংলাদেশি পর্যটকশূন্য হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
এদিকে, এ মাসের ১৩ তারিখে ক্যান্সার আক্রান্ত বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে নিয়মিত ডাক্তার দেখাতে ভারতের চেন্নাইতে গেছেন যাত্রাবাড়ীর এহতেশাম নামে এক যুবক। তিনি জানান, আগস্টের আগেও তিনি দুইবার তার বাবাকে নিয়ে চেন্নাইতে গিয়েছিলেন। সেবার দুই মাস করে অবস্থান করেন। তখন হাসপাতালের সন্নিকটে দুই রুমের একটি বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন বাংলাদেশি টাকায় সাড়ে তিন হাজার টাকা।
এবার পুরোটাই ভিন্নচিত্র। হাসপাতালের সন্নিকটে সবগুলো বাড়িই খালি পড়ে আছে। কোনো রোগি নেই। যে বাসাটি তিনি সাড়ে তিন হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছিলেন তার চেয়ে উন্নত বাসা ভাড়া নিয়েছেন মাত্র ৮শ’ টাকায়। তবে অসুবিধা হচ্ছে বাজার করতে গিয়ে। আশপাশের দোকানগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই বললেই চলে। এজন্য দূরে গিয়ে কেনাকাটা করতে হচ্ছে।