23 C
Dhaka
Tuesday, December 3, 2024

বাংলাদেশিদের জন্য কবে চালু হবে ভারতীয় ভিসা? জানা গেল অবশেষে

শেখ হাসিনার সরকার পতন পরবর্তী প্রেক্ষাপটে মেডিকেল বা জরুরি কাজ বাদে বাংলাদেশিদের অন্য কোনো ভিসা দিচ্ছে না ভারত সরকার। ক্ষমতার পালাবদলের পর গত সাড়ে তিন মাস ধরে বাংলাদেশিদের জন্য ভ্রমণসহ অন্যান্য ভিসা বন্ধ রেখেছে দেশটি।

প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া বন্ধ রেখে কোন বন্ধুত্বের বার্তা দিচ্ছে ভারত? শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর এখনো কেন স্বাভাবিক ভিসা কার্যক্রমে গেল না ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে গণমাধ্যম।

ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মধ্যে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশে ভিসা আবেদন কেন্দ্রগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে ভারত।

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশে ভিসা আবেদনগুলো সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু করে। তবে চিকিৎসা ভিসা এবং কিছু জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্যান্য ভিসা ইস্যু করবে না বলে জানিয়ে দেয় দেশটি।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার একশ দিন পার হয়েছে। দীর্ঘ এই সময়েও ভিসা প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করেনি ভারত। এর একটি কারণও দেখিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা।

পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিনের সঙ্গে গত ২০ অক্টোবর এক বৈঠকের পর প্রণয় ভার্মা সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, লোকবল কম থাকায় বাংলাদেশিদের জন্য এখনই ভারতের ভ্রমণ ভিসা স্বাভাবিক হচ্ছে না।

হাইকমিশনার যে কারণই দেখান না কেন ভিসা প্রক্রিয়া স্বাভাবিক না করাকে ভারতের ‘ডিপ্লোমেটিক সিগন্যাল’ বা ‘কূটনৈতিক চাপ’ হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা। ভারত সেটি প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও গত ১৭ অক্টোবর দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল নিয়মিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশিদের ভিসা নিয়ে যে বক্তব্য দেন তাতে সেই ইঙ্গিতই ফুটে উঠেছে।

রণধীর জয়সওয়াল বলেছিলেন, বাংলাদেশে যখন স্বাভাবিক কাজকর্ম করার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হবে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো হবে তখন ভারত ভিসা প্রক্রিয়া নিয়ে পুরোপুরি কাজ শুরু করবে।

ভারতের এই নিরাপত্তার বিষয়টি অজুহাত হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা। কারণ, ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর নিরাপত্তা বিষয় নিয়ে ঢাকায় অন্যান্য বিদেশি দূতাবাসগুলো প্রকাশ্যে এ ধরনের কোনো উদ্বেগ দেখায়নি।

তাছাড়া স্বাগতিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ভিয়েনা প্রটোকল অনুযায়ী ঢাকায় অন্যান্য বিদেশি দূতাবাস এবং কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। কোথাও কোথাও সেনা সদস্যরাও নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে।

অন্যান্য বিদেশি দূতাবাস নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হলেও ভারত কেন এত অস্বস্তি দেখাচ্ছে? জানতে চেয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. লাইলুফার ইয়াসমিনের কাছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এ বিশ্লেষক বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ এবং আন্তজার্তিক চ্যালেঞ্জকে সমন্বয় করেই কাজ করতে হয়। প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই তাদেরও আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে।’

ড. লাইলুফার ইয়াসমিনের মতে, দুদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে দুই পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে। বলেন, ‘একপক্ষীয় ভাবে বা একপক্ষের উৎসাহ দিয়ে সমস্যা সমাধান সম্ভব না। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের আলোচনাই সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পারে।’

গত ১ অক্টোবর ভিসা প্রক্রিয়া নিয়ে নিউইয়র্ক সফরকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কথা হয়েছিল। ঢাকায় ফিরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা নিজেই সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

জয়শঙ্কর তৌহিদ হোসেনকে জানিয়েছেন, ঢাকায় তাদের দূতাবাসে ভিসা ইস্যুর সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের অনেকেই ৫ আগস্টের আগে-পরে ভারতে চলে গেছে। তবে ভারত কিছু দিনের মধ্যে ভিসা ইস্যু কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু করবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তবে এখনো ভারতের তরফে এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ভারতীয় হাইকমিশন সূত্রেও ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুত স্বাভাবিক হবে, এমন কোনো আভাস পায়নি ।

তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় ভারতীয় ভিসা আবেদনকেন্দ্রটি বিভিন্ন দেশে থাকা তাদের ভিসা আবেদনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়। এটি ছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে আরও ১৫টি ভারতীয় ভিসা আবেদনকেন্দ্র রয়েছে। এসব আবেদনকেন্দ্র থেকে দিনে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি ভিসা ইস্যু করা হতো। সবমিলিয়ে বছরে ১৫ থেকে ১৬ লাখ বাংলাদেশি ভিসা নিয়ে ভারতে যায়। এ সংখ্যা কখনও কখনও বাড়েও। সূত্র : ঢাকা টাইমস

সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ