23 C
Dhaka
Friday, November 22, 2024

হুইলচেয়ার নিয়ে রাস্তায় আহতরা, উপদেষ্টাদের জন্য অপেক্ষা

সন্ধ্যা ৭টার দিকে ‘জুলাই শহীদ ফাউন্ডেশন’ এর পক্ষ থেকে আন্দোলনে নিহত মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন।

কেউ আছেন হুইলচেয়ারে, আবার কেউ ভাঙা পা নিয়েই একটি চেয়ার পেতে বসে আছেন। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের সামনের রাস্তায় এভাবে অন্দোলন করছেন জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সৃষ্ট সহিংসতায় আহত ব্যক্তিরা। তারা নিটোর হাসপাতালেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। আন্দোলনরত আহত ব্যক্তিদের বক্তব্য, উপদেষ্টারা না আসা পর্যন্ত তারা রাস্তা ছাড়বেন না এবং হাসপাতালের ভেতরে ফিরেও যাবেন না।

আন্দোলনকারীরা উপদেষ্টাদের হাজির হওয়ার জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছেন। আন্দোলনকারীরা বলছেন, রাত ১০টার মধ্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, তথ্য উপদেষ্টা, যুব উপদেষ্টা, সমাজ কল্যাণ উপদেষ্টাকে পঙ্গু হাসপাতালের সামনে উপস্থিত হতে হবে।

রাজধানীর আগারগাঁও থেকে শ্যামলীমুখী সড়ক বন্ধ করে রাতেও আন্দোলন করছেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) চিকিৎসাধীন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আহতরা। বুধবার (১৩ নভেম্বর) রাত সোয়া ৮টার দিকে একপাশের রাস্তা বন্ধ করে দেন তারা। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের পদত্যাগের দাবিতে তারা শ্লোগান দিচ্ছেন।

সন্ধ্যা ৭টার দিকে ‘জুলাই শহীদ ফাউন্ডেশন’ এর পক্ষ থেকে আন্দোলনে নিহত মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। তিনি আহতদের সুচিকিৎসা ও প্রয়োজনে বিদেশে নেয়ার আশ্বাস দেন। তবে বিক্ষোভকারীদের হৈ চৈ এর মুখে স্নিগ্ধ কথা শেষ করতে পারেননি। বারবারই তাকে থেমে যেতে হয়। আন্দোলনকারীরা স্নিগ্ধকে তাদের সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলনে অংশ নিতে অনুরোধ করেন।

এর আগে দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে তারা সড়কে নেমে আসেন। ফলে শ্যামলীমুখী গাড়ির চাপ বাড়ে ও যানজটের সৃষ্টি হয়। এসময় হাসপাতালের গেটের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়। এছাড়া বিকেল ৩টায় সেনাবাহিনীও ঘটনাস্থলে আসে।

দুপুরে নিটোর পরিদর্শনে আসেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত। তিনি প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে আহত রোগীদের খোঁজ-খবর নেন। এরপর হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার সময় সেখানে সাংবাদিকরা কথা বলতে চাইলে আশপাশের আহত রোগীদের সরতে বলা হয়। এরপর আন্দোলন হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসাধীন আহতরা উপদেষ্টার গাড়ির সামনে ও পথ আটকে দাঁড়ান।

এক পর্যায়ে আন্দোলনে আহতদের একজন গাড়ির সামনে বসে পড়েন। আরেকজন উঠে পড়েন গাড়ির ওপর। কিছু সময় তারা গাড়িতে কিল-ঘুসিও মেরে ক্ষোভ দেখাতে থাকেন। নেমে আসতে বলেন গাড়ির চালকসহ অন্যদের। পরে নিরুপায় হয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত অন্য একটি গাড়িতে করে সেখান থেকে বেরিয়ে যান।

এমন পরিস্থিতি তখন শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ সদস্যরা সামাল দিতে পারেননি। পরে র‌্যাব-২ এর সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। তারপর দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে সেনাবাহিনীর ৫টি ইউনিট হাজির হয়। কিন্তু কোনো বাহিনীর সদস্যরাই আহত আন্দোলনকারীদের থামাতে পারেননি। পরে ধীরে ধীরে সবাই চলে যান। বর্তমানে পুলিশের কিছু সদস্যকে সেখানে মোতায়েন রাখা আছে।

আহত শিক্ষার্থী মো. হাসান বলেন, আমাদের সামান্য ট্রিটমেন্ট দিয়ে তিন মাস বসিয়ে রাখা হয়েছে। আমার পায়ে নয়টি অপারেশন করা হয়েছে, তারপরও এখন পর্যন্ত সুস্থ হতে পারিনি। আমাদের অপারেশনে শুধু নিয়ে যায়। আমরা চাই তারা সবাই আমাদের সঙ্গে কথা বলুক। আমাদের জন্য ঘোষণা করা সেই এক লাখ টাকা দিক এবং ভালোমানের চিকিৎসাসেবা দিক।

আন্দোলনরতদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সিলেকটিভ কিছু রোগীর সঙ্গেই কথা বলেছেন, তাদের প্রত্যাশা ছিল তিনি যেন সবার খোঁজ নেন। সমস্যা শুনে সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ নেন। কিন্তু মনের কথাগুলো শোনাতে না পেরে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে যান। কেউ কেউ খাওয়া-দাওয়ার মান নিয়েও অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও তাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা ও ভালো চিকিৎসা দিতে বিদেশে নেয়ার আবেদন জানালেও ব্যবস্থা নেয়নি কেউ।

সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ