রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আওয়ামী লীগ শাসনামলে ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন ছাত্রদল নেত্রী। একই সঙ্গে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেত্রীকে ছাত্রলীগ নেত্রীর তকমা দিয়ে অপপ্রচারের অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ছাত্রদল নেত্রী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি (বিআরইউ) কার্যালয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) গণিত বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল নওরীন উর্মী সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন।
লিখিত বক্তব্যে উর্মী জানান, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ববি উপাচার্য বরাবর অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে প্রকাশ্যে ৩ জনসহ আরও ৮ শিক্ষার্থী মুঠোফোনে বলেছেন- তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে প্রতারণামূলক স্বাক্ষর নিয়েছে। আবার কারো স্বাক্ষর বিশ্বস্ততার সুযোগে নিয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ২০২০ সালের ১ মার্চ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে আমার ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়। হামলাকারীরা হলেন- ববি’র সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আলীম সালেহীন, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সপ্তম ব্যাচের ছাত্র আরিফুল ইসলাম, আবদুল্লাহ ফিরোজ এবং পঞ্চম ব্যাচের হাফিজ ও আসাদুজ্জামান আসাদ।
আরও পড়ুনঃ মার্কিন সেনাবাহিনীর গুদামে রহস্যজনক আগুন, দাউ দাউ করে জ্বলছে
তারা জ্যামিতি বক্সের কাটা কম্পাস দিয়ে আমার বুকে ও গলায়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুটো করে দেয়। যে চিহ্ন এখনও শরীরে রয়েছে। আওয়ামী লীগ শাসনামলে বিচার চেয়ে পাইনি।
এমনকি নিয়মিত পড়াশুনাসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিভাগ থেকে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তখন ববি’র ছাত্রদলের পক্ষ থেকে আমার প্রতি কোনো ভূমিকা নেওয়া হয়নি। সেই সময় ববি ছাত্রদলের কমিটিতে সভাপতি রেজা ও সাধারণ সম্পাদক হাসিব দায়িত্বে ছিলেন।
তিনি বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর পুনরায় পরীক্ষার বিষয়ে আলোচনা করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সঙ্গে দেখা করি। তখন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলি ‘মাথা নয়, মেধা চাই’, ছাত্রদলে চাঁদাবাজ ও মাদকাসক্তদের কোনো স্থান নেই। এতে ক্ষিপ্ত হয় কয়েকজন। কেননা গত ৮ অক্টেবর বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের ছাত্র মিনহাজ সাগর চাঁদাবাজির অভিযোগে ববি’র ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার হয়েছে।
পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ার পর তার রেজাল্ট স্থগিত রয়েছে। মিনহাজ সাগর তার ফেসবুক আইডিতে আমাকে নিয়ে অশ্লীল ভাষায় লেখালেখি করেছেন। যে কারণে সাইবার নিরাপত্তা আইনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
ববি’র ক্যাম্পাসে এই মিনহাজ সাগর এখনও কয়েকজন শিক্ষার্থীদের নিয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছেন। তার প্রধান সহযোগী হলেন- বাংলা বিভাগের ৮ম ব্যাচের গোলাম রসুল, লোক প্রশাসন বিভাগের ১০ম ব্যাচের আব্দুর রহিম, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ৮ম ব্যাচের মুজাহিদসহ একটি চাঁদাবাজ চক্র।
সংবাদ সম্মেলনে উর্মী জানান, গত বুধবার তার বিরুদ্ধে ববি’র উপাচার্য বরাবর ‘নিষিদ্ধ সংগঠন (ছাত্রলীগ) এর সন্ত্রাসী কর্মীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল করার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে’ শতাধিক শিক্ষার্থীর গণস্বাক্ষরিত লিখিত আবেদন করা হয়। আর তাতে যারা স্বাক্ষর করেছেন তারা জানিয়েছেন আবেদনে স্বাক্ষর নেওয়ার পর মূল পৃষ্ঠা পরিবর্তন করা হয়েছে।
আবেদনে স্বাক্ষরকারী শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন, আরিফুল ইসলামসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আবেদনপত্রটি পরিবর্তন করা হয়েছে। যার তথ্য প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন বলেন, শিক্ষার্থীদের একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।