চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল পারিবারিকভাবে রাব্বি ও রুমী খাতুনের বিয়ে সম্পন্ন হয়। কিন্তু তাদের যুগল জীবন যাপন বেশিদিন কাটাতে পারেননি তারা। অনাগত সন্তানের মুখও দেখা হয়নি রাব্বির।
পৃথিবীর সব মায়াকে তুচ্ছ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ডাকে সাড়া দেন ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান রাব্বি। বিয়ের মাত্র সাড়ে চার মাস পর আন্দোলনে শহীদ হন তিনি।
নিহত মেহেদী হাসান জেলা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি মাগুরা পৌরসভার বরুণাতৈল গ্রামের মৃত ময়েন উদ্দিনের ছেলে।
ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান রাব্বির স্ত্রী রুমী খাতুন বলেন, গত ১৪ এপ্রিল পারিবারিকভাবে আমাদের বিয়ে হয়। আমাদের সন্তান অনাগত। অথচ সে তার মুখ দেখে যেতে পারলেন না।
রুমী খাতুন বলেন, রাব্বির নামে দুটি মিথ্যা মামলা করা হয়েছিল। ঘটনার কয়েকদিন আগে সে আমাকে জানিয়েছিল আমি যেকোনো মুহূর্তে গ্রেপ্তার হতে পারি। আমি তাকে বলেছিলাম সাবধানে থাকতে। সে কয়েক রাত আত্মগোপনে ছিল। তবে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।
তবে সে ঘরবন্দি থাকতে পারেনি। বলছিল আমি আর থাকতে পারছি না। মাগুরায় প্রোগ্রাম করতে উদগ্রীব ছিল। বলছিলেন এবার মাগুরায় স্মরণীয় প্রোগ্রাম করব, সবাই মনে রাখবে। মোবাইলে বিএনপি নেতা নিতাই রায়ের ছেলের সঙ্গে কথা বলছিলেন এবার স্মরণীয় প্রোগ্রাম করবে।
কীভাবে কী করবে সেই আলোচনা করছিল। পরদিন শনিবার সকালে খাবার খেতে খেতে বলছিল, আমি যে কোন সময় গ্রেপ্তার হব, তুমি যোগাযোগ রাখবা। ফোন সবসময় কাছে রাখবা, আমি যেখানেই থাকি যোগাযোগ রাখবো। পরে বেরিয়ে যায়। ৩ আগস্ট রাতে অন্যস্থানে ছিল।
তিনি আরও বলেন, ৪ আগস্ট সকালে বাড়িতে ছেলেরা মোটরসাইকেল নিয়ে আসে। সকাল ১০টার দিকে আমি ফোন করে বললাম লোকজন এসেছে। বলল, কোনো সমস্যা নেই, তুমি ঘরের ভেতরে থাকো। আমি বললাম সবজি শেষ আমি কি করবো।
সে (রাব্বি) বললো আপাতত কিছু এনে রান্না করো, সন্ধ্যার সময় তোমার সব সমস্যার সমাধান করে দেব। বেলা ১১টার দিকে আবার ফোন করি, সে তখন হাফাচ্ছিল। পরে বাসায় এসেছিল। ওটাই ছিল শেষ বাড়িতে আসা এবং আমাদের সঙ্গে শেষ কথা। রিকশায় করে সে চলে যায়। পরে রিকশাচালক এসে জানায় তার (রাব্বির) গুলি লেগেছে। শুনে হাসপাতালে যাই। সেখানে তার সঙ্গে আর কোনো কথা হয়নি।
রুমী খাতুন অভিযোগ করে বলেন, রাব্বির মৃত্যুর ঘটনায় মামলা করা হলেও আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে উদাসীনতা আছে।
এদিকে শহীদ মেহেদী হাসান রাব্বির বিয়ের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মাগুরার শ্যামল প্রান্তরে, নদীর ধারে শহীদ রাব্বি তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর হাতে বেগুনি রঙের পানাফুল তুলে দিচ্ছেন। স্ত্রীকে নিয়ে নদীর ধার ঘেঁষে হেঁটে চলেছেন।
এ বিষয়ে নিহত ছাত্রদল নেতা রাব্বির স্ত্রী রুমী খাতুন বলেন, ভিডিওটি বিয়ের দিনে করা হয়েছিল। যে ক্যামেরাম্যান ভিডিও করেছিল তিনিই ছেড়েছিলেন। ভিডিওটি গত ১৪ মে ফেসবুকে ছাড়া হয়। তবে সম্প্রতি সেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়।
জানা গেছে, মাগুরা সদর থানায় মামলাটি করেন নিহত মেহেদীর ভাই ইউনুস আলী। মামলায় ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়।