চট্টগ্রামের আনোয়ারায় পাহাড় থেকে আমেনা বেগম (৩৫) নামে এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং হাজী পাড়া এলাকার জাহেদ নাবেদ (৩০) ওরফে মো. জাহেদ প্রকাশ নাহিদ ও আনোয়ারা উপজেলার ইরফান (৩২)।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ দিদারুল ফেরদৌস গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য এলাকা খাগড়াছড়ি ও বাঘাইছড়ির বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সম্প্রতি তিন দিনের রিমান্ড শেষে আসামি নাহিদ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আদালত নং-৫ চট্টগ্রাম) এর বিচারক ফারদিন মুস্তাকিম তাসিনের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি শেষে গ্রেপ্তার দুই আসামিকে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সম্প্রতি তিন দিনের রিমান্ড শেষে আসামি নাহিদ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারদিন মুস্তাকিম তাসিনের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। জবানবন্দী শেষে গ্রেপ্তার দুই আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সুত্রে জানায়, গত ৩ অক্টোবর আনোয়ারা উপজেলার পরিত্যক্ত একটি ইটভাটা থেকে গৃহবধূ আমেনার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহটি পচে যাওয়ায় পরিচয় শনাক্ত করা যাচ্ছিল না পুলিশ। পরে খবর দেয়া হয় পিবিআইয়ের ক্রাইম সিন ইউনিটকে।
পরে এক দিনের মধ্যে উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত ওই নারীর পরিচয় শনাক্ত করে পিবিআই জানায়, উদ্ধার হওয়া মরদেহটি আমেনা বেগম নামে ৩৫ বছর বয়সী এক নারীর। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর বলুয়ার দিঘির পাড় এলাকার আবুল কালাম সওদাগর কলোনির বাসিন্দা কামাল উদ্দিনের মেয়ে। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার নাগেরকান্দি গ্রামে।
পিবিআই আরও জানায়, ওই নারীর পেটে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে মরদেহটি পাহাড়ে ফেলে চলে যায়। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে পিবিআই। এমনকি ঘটনায় সরাসরি জড়িত দুই জনকে গ্রেপ্তার করে। পরে আসামি নাহিদ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন।
আসামির দেয়া তথ্য ও পুলিশ সূত্র জানা যায়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর খুন হওয়া গৃহবধূ আমেনার স্বামী ইয়াসির আরাফাত ফোন করে নাহিদকে জানান, সে দুবাই থেকে আসছে। পার্টি করবে। পরে ইয়াসির এবং তার আরেক বন্ধু ইরফান আগ্রাবাদে আসে। সেখান থেকে ৩০ তারিখ রাতে সিএনজি করে আনোয়ারায় ইরফানের বাড়িত যান।
তারপর তারা সেখানে ইয়াবা ও মদ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। পর দিন পহেলা অক্টোবর রাত ১০টার দিকে ইয়াসিরের স্ত্রী ভিকটিম আমেনা তাকে ফোন করেন। তার একটু পর ইয়াসিন ও ইরফান আরেক বন্ধুর গাড়িতে করে নগরীর কালামিয়া বাজার যান। তখন নাহিদ ইরফানের বাড়িতেই ছিলেন। রাত সাড়ে ১২ টার দিকে আমেনাসহ দুজন আবার ইরফানের বাসায় ফিরে যান।
পরে চার জন মিলে এক সঙ্গে ইয়াবা ও মদ সেবন করেন। রাত ৩ টার দিকে তারা প্ল্যান করেন গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বের হবেন। গাড়ি নিয়ে বের হয়ে তারা প্ল্যান করেন টানেলে ঘুরতে যাবেন। পরে প্ল্যান পরিবর্তন করে সিদ্ধান্ত নেন পাহাড়ে বসে মদ খাবে। ইরফান তাদের আনোয়ারার একটি পাহাড়ে নিয়ে যান। সেখানে যাবার পর ইয়াসিন ও তার স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়।
ঝগড়ার এক পর্যায়ে হঠাৎ ইরফান আমেনার পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। পরে ইয়াসিন কোমর থেকে একটি ছুরি বের করে আমেনার পেটে ডুকিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর আমেনার মৃত্যু হলে তিনজনে মিলে নিহতের কাপড় কেটে নালার মধ্যে লাশ ফেলে দেয়। তারপর সেখান থেকে তিনজন ইয়াসিরের খালাতো ভাইয়ের বাসায় যায়। তারপর যে যার মতো চলে যান।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, স্ত্রীকে ঠান্ডা মাথায় খুন করে ইয়াসির গত ৩ অক্টোবর পুনরায় দুবাই চলে যান।
এ বিষয়ে নিহত আমেনার বাবা কামাল উদ্দিন জানান, আমার মেয়েকে বেড়ানোর কথা বলে পাহাড়ে নিয়ে গিয়ে তার স্বামী খুন করে। আমি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
এ প্রসঙ্গে আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন জানান, আমরাও জেনেছি এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
প্রসঙ্গত, নিহত গৃহবধূ দুবাই প্রবাসী ইয়াসিনের দ্বিতীয় স্ত্রী। এ সংসারে তাদের একটি সন্তান রয়েছে। ইয়াসিনের প্রথম সংসারেও দুই সন্তান ছিল।