দেড় বছর ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের পর অন্যত্র বিয়ে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। তিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) বাংলাদেশ অ্যান্ড মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান। তার বিরুদ্ধে নিজ বিভাগের ছাত্রীর সঙ্গে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য কাছে অভিযোগপত্র দেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।
অভিযোগপত্রে ওই ছাত্রী জানান, “২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১৪ মার্চ ২০২৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ তিন মাস তিনি আমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক জড়ানোর জন্য আমাকে মানসিক অত্যাচার করে। পরবর্তীতে আমি তার সাথে যোগাযোগ করতে না চাইলে ও সব জায়গা থেকে তাকে ব্লক দিলে তিনি (শিক্ষক) অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকতেন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে কল দিয়ে তিনি বলতেন আমাকে পেলে তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন। পরে তিনি আমার মায়ের নম্বর জোগাড় করে ফোন দিয়ে বলেন, ‘পৃথিবীর সব সুখ আমি আপনার মেয়েকে দেব, কোনো স্বামী এই পৃথিবীতে দিতে পারবে কি না আমি জানি না, তা-ও আমার মা নিষেধ করে দেন।”
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযোগপত্রে লেখেন, এমন করে করে তিনি আমাকে ফাঁদে ফেলে দিতেন এবং মানসিকভাবে আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং একটা পর্যায়ে ভাবতে থাকি আমার কারণে একটা মানুষ এত কষ্ট পাচ্ছে। ২০২৩ সালের ১১ মার্চ তিনি তার পিএইচডি ছেড়ে আমার কারণে দেশে চলে আসেন এবং বলেন আমার আশপাশে থাকলেই তিনি ভালো থাকবেন।
আমার একাডেমিক লাইফে ক্ষতির সম্ভাবনা, মোস্তাফিজুর রহমানের প্রতিনিয়ত কান্নাকাটি ও জোরাজুরি এবং নানান বিষয়ে ডিপ্রেশনে থাকার কারণে আমি তার সাথে সম্পর্কে যেতে রাজি হই। আমার সাথে তার সম্পর্ক চলতে থাকে স্বাভাবিক নিয়মে। এর মধ্যে কয়েক দফা তিনি আমাকে একা একা বিয়ে করে ফেলার কথা বলেন কিন্তু আমি বলেছি ফ্যামিলিকে জানাও তারপর বিয়ে করব। ২০২৪ সালের কুরবানি ঈদের সময় থেকে তিনি পরিবারে জানান এবং তার ভাষ্যমতে তার পরিবার রাজি হয় না।
এরই মধ্যে আমি আমার পরিবারকে জানাই এবং সকলে সম্মতি প্রকাশ করে আমাদের বিয়ের জন্য। কিন্তু বেশ কিছু দিন যাবত তিনি আমাকে বোঝাতে থাকেন তার পরিবার অন্যত্র তার জন্য পাত্রী দেখছেন, কিন্তু তিনি আমাকেই চান।
গত ৮ এবং ৯ অক্টোবর আমার খালামনির সাথে কথা বলে মোস্তাফিজ বলেন, তিনি তার ফ্যামিলি ছেড়ে আমাকে বিয়ে করবেন, আমাকে আগামী ২-৩ বছরেও স্ত্রী বলে পরিচয় দেবেন না কোথাও এবং ছাত্রীকে বিয়ে করার কারণে যদি তার চাকরি যায় আমাকে আয় করে তাকে খাওয়াতে হবে, আমার পরিবারকে তার দায়িত্ব নিতে হবে এবং তিনি এখন একাই বিয়ে করবেন আমাকে কাজী অফিসে যেতে হবে। আমার পরিবারের কেউ যেতে পারবে না।
আমার পরিবার আমার দিকে তাকিয়ে তার সব শর্তে রাজি হয়। পরবর্তীতে ১১ অক্টোবর শুক্রবার তিনি আমাকে বিয়ে করবেন বলে ঢাকা যেতে বলেন। আমি তার কথা বিশ্বাস করে ঢাকা যাই। কিন্তু তিনি নানা টালবাহানা করতে থাকেন। একপর্যায়ে তার বাবা অসুস্থ বলে আমার থেকে তড়িঘড়ি বাড়ি যাবে বলে বিদায় নেয়। আমাকে বিদায় দেওয়ার সময় জড়িয়ে ধরে কপালে চুম্বন করে বলেন, ‘আমি আমার বাবাকে দেখে এসে তোমাকে বিয়ে করবো ময়না, আমার অপেক্ষা করিও, আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো বিয়ে ওইটা ভাঙানোর, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।’ পরবর্তীতে জানতে পারি তার বাবা অসুস্থ হয়নি। বরং ১৩ অক্টোবর রবিবার চট্টগ্রামে তিনি অন্য একজনকে বিয়ে করেন, যার সাথে তার ৩ মাস আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযোগপত্রে আরও লেখেন, তার বিয়ের সংবাদ পেয়ে আমি মানসিকভাবে অনেক ভেঙে পড়ি। পরে ১৪ তারিখ আমি চট্টগ্রাম চলে যাই এবং তার স্ত্রীর নম্বর সংগ্রহ করে রাত সাড়ে ৯টা থেকে পৌনে ১২টা নাগাদ তার এবং তার স্ত্রীর সাথে আমার দেখা হয় আগ্রাবাদ জাম্বুরী পার্কের সামনে।
শেষ দিকে তার স্ত্রী আমার বান্ধবীর সাথে কথা বলছিলেন এমন সময় মোস্তাফিজ আমাকে বলেন, ‘একটু কাছে আসো, তুমি কী চাও? আমি বললাম আমি তোমাকে চাই’ উনি বললেন, তুমি আমার বউয়ের কাছে যা যা বলে গেছো এরপর ও আর আমাকে রাখবে না, ও আমাকে ছেড়ে দিলে তুমি আমাকে গ্রহণ করবা তো? আমি বললাম, হ্যাঁ করবো।’
সেখান থেকে আসার পর ১৫ অক্টোবর সকাল থেকে আমি মানসিকভাবে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং তার স্ত্রীকে কল দিয়ে তাকে ছেড়ে দিতে বলি কিন্তু তারা একসাথে বলেন, তারা কেউ কাউকে ছাড়বে না। দুপুর দিকে আমার শারীরিক অবস্থার খুবই অবনতি ঘটে এবং আমাকে চট্টগ্রাম আগ্রাবাদের মা ও শিশু হাসপাতাল ভর্তি করায় আমার বান্ধবীর পরিবার। সেখানে আমার পরিবার আসে। এবং আমাকে ১৬ তারিখ ডিসচার্জ করা হয় কিন্তু বাসায় আসার পর অবস্থা আরও অবনতি হয়।
ভুক্তভোগী ছাত্রী এই ঘটনার বিচার চেয়ে বলেন, আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে এমন প্রতারণার দ্বারা আমি এবং আমার পরিবার মানসিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমি এর বিচার চাই৷
উপাচার্য বরাবর অভিযোগ দিতে এসে ভুক্তভোগীর মা সাংবাদিকদের বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষক আমার মেয়ের সাথে যা করেছে, সেটা অন্যায়। বিগত কয়েক দিন আমাদের পরিবারের কারও চোখে ঘুম নেই। মেয়েটার টেনশনে আমরা সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েছি। তিনি যদি আমাদের কোনোভাবে বলতেন তিনি অন্যত্র বিয়ে করবেন তাহলে আমরা আমাদের মেয়েকে বুঝিয়ে বলতাম। তাকে সে মানসিকভাবে নির্যাতন করেছে। আমরা তার উপযুক্ত বিচার চাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমানের মোবাইলে বারবার কল করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও নিজের আইডি ডিজেবল করে রেখেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ আমি বিস্তারিত শুনেছি এবং অভিযোগপত্র হাতে পেয়েছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি নির্মূল কমিটি রয়েছে। তারা এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। অপরাধ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।