26 C
Dhaka
Saturday, November 23, 2024

আ.লীগ ফ্যাসিস্ট পার্টি, তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরও গ্রেফতার করা জরুরি: তথ্য উপদেষ্টা

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘গত ১৬ বছরে লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মানুষের মাঝে যে প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে, তার চূড়ান্ত রূপ হলো ৩৬ দিনের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন। এই আন্দোলনের মধ্যে শেখ হাসিনা নিয়মতান্ত্রিকভাবে পদত্যাগ করেন নাই, এটা আমাদের সবার কাছে স্পষ্ট। তার পতন হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ তার পতন ঘটিয়েছে।’

আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট পার্টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মধ্যে যারা পরিচিত ছিলেন, জনগণ তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন। আওয়ামী লীগ কিন্তু একটা ফ্যাসিস্ট পার্টি। তৃণমূল পর্যন্ত তার কমিটি আছে, বাহিনী আছে। সে বাহিনী কিন্তু একই রকম ক্ষতিকারক।

বাংলাদেশের জনগণের জন্য আসলে হুমকি। বড়দের সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরও গ্রেফতার করা জরুরি। আমরা সেদিকে মনোযোগ দিচ্ছি। যাতে তৃণমূলে ছাত্রলীগ-যুবলীগ যারা আছে এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম করছে, তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা যায়।’

বুধবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে ‘গণঅভ্যুত্থানের সরকার: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আপনারা যারা দেশে রয়েছেন, দিবাস্বপ্ন দেখছেন, তাদের উচিত সমাজে সন্ত্রাসী কার্যক্রম না করে আত্মসমর্পণ করা। তাহলে হয়তো শাস্তি কিছুটা কম হতে পারে। যারাই আওয়ামী ফ্যাসিবাদী রাজনীতির অংশীদার ছিল,

সুবিধাবাদী ছিল, তাদের একটাই পরিচয়; সে ফ্যাসিস্ট এবং গণহত্যাকারী। সে কবি, সাংবাদিক, শিক্ষক কিনা এটা আসলে আমাদের বিবেচনার বিষয় নয়। আমরা দেখেছি, শিক্ষকদের একটা অংশ আন্দোলনের সময় আমাদের সঙ্গে ছিলেন; তবে বড় একটি অংশ বিপক্ষে ছিলেন।’

উপদেষ্টা বলেন, ‌‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে যেন ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা গড়ে না ওঠে, সেজন্য সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। জনগণের মনের ভাষাকে রাজনীতির ভাষায় রূপান্তর করতে হবে। এ লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে। অনেকে বর্তমান সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে তুলনা করেন। এই ধারণা একেবারেই ভুল।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাজ হলো নির্বাচন আয়োজন করে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। আর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আসা বর্তমান সরকারের লক্ষ্য হলো রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার করে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পথ মসৃণ করা। আওয়ামী লীগ যে মতাদর্শ ও প্রক্রিয়ায় রাজনীতি করেছে, সেই আওয়ামী লীগ আর বাংলাদেশে কখনও আসবে না। যদি আসে সেটা হবে শহীদদের সঙ্গে প্রতারণা।

আওয়ামী লীগ সংবিধান পরিবর্তন করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে নেয়। এরপর তারা একের পর এক নির্বাচনকে আয়ত্তে নিয়ে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে। বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, যেখানে মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। আমাদের এমন একটি রাজনৈতিক কাঠামো সৃষ্টি করতে হবে, যেখানে কেউ যেন আরেকজন শেখ হাসিনা হয়ে উঠতে না পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনটা ছিল ৩৬ দিনের। ৩৬ দিনে আওয়ামী সরকারের পতন হয়েছে। সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের জন্ম এখন নয়। এক-এগারোর সময় থেকেই মূলত এই সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের জন্ম। এরপর থেকেই তারা তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা চালাতে থাকে।’

জুলাই আন্দোলন মূলত মর্যাদার লড়াই উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের যখন রাজাকার বলা হয়েছে তখন এইটা আমাদের মর্যাদা টিকিয়ে রাখার একটি চ্যালেঞ্জ সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল। তখনকার মিডিয়া, পুলিশ প্রশাসন সব কিছুই তাদের পক্ষে ছিল। আমাদের কথা বলার কোনও সুযোগ দেয় নাই। বর্তমান সরকার যদি মৌলিক কিছু সংস্কার করতে না পারে তাহলে আমাদের ব্যর্থতা থেকে যাবে। আমরা একটি ধারা বন্দোবস্ত করতে চাই যার মাধ্যমে নতুন করে যেন আবার স্বৈরাচার সরকার না আসতে পারে।’

জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি মুশফিক উস সালেহীনের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল।

আলোচনার শুরুতে বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রব। অনুষ্ঠান শেষে তথ্য উপদেষ্টা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অদম্য ২৪’ স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন।

সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ