হবিগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে আদালত প্রাঙ্গণে ‘চোর,চোর’, ‘দালাল,দালাল’ বলে গালাগালি করেছেন উৎসুক আইনজীবীরা।
আর রিমান্ড শুনানিতে ব্যারিস্টার সুমনকে ‘ভেলকি এমপি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।
আজ মঙ্গলবার সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে পাঁচ দিন রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইন এ আদেশ দেন।
এর আগে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হালিম ব্যারিস্টার সুমনকে ১০ দিন রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন।
এদিন দুপুর ১২টায় কড়া পুলিশ পাহারায় ব্যারিস্টার সুমনকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত চত্বর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবী দিয়ে পরিপূর্ণ ছিল। আদালতের কাঠগড়ায় সুমনকে হাজির করা হয় হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে। এদিন তাকে আদালত প্রাঙ্গণে উৎসুক আইনজীবীরা ‘চোর চোর’ বলে কটাক্ষ করতে থাকেন। এ সময় সুমন মাথার হেলমেট খুলে মুখে আঙুল দিয়ে সবাই চুপ করতে বলেন।
এরপর আদালতে রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী ও আদালত পরিদর্শক আসাদুজ্জামান আসাদ।
শুনানিতে আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘আসামি ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। এই আসামি ৫ আগস্টের পরে আমরা দেখলাম, ফেসবুকে কথা বলছে। সে লন্ডন থেকে কথা বলছে। সে দেশের জনগণকে বুঝিয়েছে, দেশে নেই। তার জীবনটাই চতুরতার, সে এমন মাধ্যম ব্যবহার করে কাজ করে থাকে। আমরা ফেসবুকে দেখেছি, সে জনগণের কাছে বিভিন্ন ধরনের বার্তা দেয় যে, সে লন্ডনে আছে। পরে দেখা গেল, মিরপুরে তার বোনের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে সেখানে পালিয়ে ছিল, আত্মগোপনে ছিল।’
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী আরও বলেন, ‘কিছু মানুষ আছে যারা প্রকৃতপক্ষে কোনো রাজনীতি করে না। কিন্তু মানুষের সঙ্গে চতুরতা ও প্রতারণা করে এবং মানুষকে কিছু ভেলকি দেখিয়ে রাজনীতিতে অবস্থান করে নিতে চায়। সে একজন ভেলকি এমপি। সে নিজেকে সেলফি এমপি হিসেবে দাবি করে। সে অবৈধ পার্লামেন্টে দাঁড়িয়েও বলে, সে সেলফি এমপি। সে চুনারুঘাট এলাকায় মানুষের সঙ্গে বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে এবং বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা এনে নামমাত্র নালার মধ্যে ছোট ছোট ব্রিজ বানিয়ে প্রতারণা করেছে। সে অবৈধভাবে গত নির্বাচনে সকাল ৮টার মধ্যে ব্যালটবাক্স ভর্তি করে নিজেকে অবৈধ এমপি হিসেবে দাবি করে।’
ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘আমরা পত্রপত্রিকায় দেখেছি, ব্যারিস্টার সুমন এমপি কোটায় সবচেয়ে দামি গাড়ি আমদানি করেছে। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় গাড়িটা আর চালাতে পারেনি।’
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘তার (সুমন) প্রতারণার একটা উদাহরণ দিয়ে বলি, সে একবার কারেন্টের পিলার নিজের লোক দিয়ে রাস্তার মধ্যে এনে ভিডিও করে। কিন্তু পরে তার বিষয়টা ধরা পড়ে যায়, এটা মেকি ছিল। সে এমন ভিডিও দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে স্থান দখলের চেষ্টা করেছে। ব্যারিস্টার সুমন কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় ছাত্রদের সঙ্গে ছিল। সে ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে ছিল। সে ব্যারিস্টার, সে কেন পালাবে। সে খারাপ কাজ করেছে বলেই সে পালিয়েছে, তার মধ্যে দুর্বলতা ছিল। তার রিমান্ডের আদেশ চাচ্ছি।’
এরপরে সুমনের পক্ষে আইনজীবী বলেন, ‘মামলার এজাহারে সুমনের বিরুদ্ধে কিছু নেই। সে সাসপেক্টেড (সন্দেহভাজন)। আমরা সুমনের রিমান্ড নাকচপূর্বক জামিন চাই। এরপরে বিচারক পাঁচ দিন রিমান্ডের আদেশ দেন।’
এরপর পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়ে বিচারক চলে গেলে ব্যারিস্টার সুমন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকীকে ডাক দিয়ে ‘সরি’ বলেন। এ সময় অন্য আইনজীবীরা ‘দালাল’ বললে তিনি তখন সব আইনজীবীর কাছে ক্ষমা চান।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম জানান, গতকাল সোমবার দিনগত রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর মিরপুর-৬ থেকে ব্যারিস্টার সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়ার কিছু সময় আগে সোমবার দিনগত রাত সোয়া ১টার দিকে নিজের ফেসবুক ভেরিফায়েড আইডি থেকে একটি পোস্ট দেন ব্যারিস্টার সুমন। এতে তিনি লেখেন, ‘আমি পুলিশের সঙ্গে যাচ্ছি। দেখা হবে আদালতে। দোয়া করবেন সবাই।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালানোর অভিযোগে গত ১১ সেপ্টেম্বর সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনসহ ৯৭ জনের বিরুদ্ধে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানায় মামলা হয়। মামলায় অজ্ঞাত ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়।