সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন অসত্য কথা বলেননি বলে মন্তব্য করেছেন দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী। সোমবার রাতে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আসল ঘটনাটা কি সেটা জানার চেষ্টা করেছি আমি, অনেকদিন। তারপর প্রেসিডেন্ট (রাষ্ট্রপতি) সাহেবের সাথে কথা বলেছি। প্রেসিডেন্ট সাহেব যা সত্য তাই বলেছেন।
এখানে ষড়যন্ত্রেরও কিছু নেই আর প্রেসিডেন্ট অসত্য কথা বলেছেন বলেও তো আমার মনে হয় না। তিনি তো পরিষ্কার বলেছেন, বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে। ওই রিপোর্টেও কিন্তু তিনি নিজেই বলেছেন যে, এটা মীমাংসা হয়ে গেছে। সেটাও ছাপা হয়েছে। এটার মধ্যে ষড়যন্ত্রের কি আছে?’
সম্প্রতি দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আলাপকালে রাষ্ট্রপতি জানান, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন এমন কোনো দালিলিক প্রমাণ তাঁর কাছে নেই।
কথোপকথনটি সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’—এ প্রকাশিত হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে সোমবার সচিবালয়ে এর মধ্যে সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দাবি করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মিথ্যাচার করেছেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেছিলেন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং তিনি সেটা গ্রহণ করেছেন। এখন আড়াই মাস পর বলছেন, তাঁর কাছে শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নেই। এমন কথা বলা স্ববিরোধিতা।’
আসিফ নজরুল দাবি করেন, ‘তিনি (রাষ্ট্রপতি) মিথ্যাচার করেছেন, যা শপথ ভঙ্গের শামিল। তাঁর বক্তব্যে অটল থাকলে তিনি পদে থাকতে পারেন কিনা তা উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচিত হতে পারে।’
রাষ্ট্রপতির সাথে কথোপকথনের বিষয়ে মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি আগে যা বলেছেন, আমার রিপোর্টে এটার উল্লেখ আছে। তিনি (রাষ্ট্রপতি) বলেছেন, বিশেষ রেফারেন্সের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে। তিনি এটা বলেছেন যে, উনি (শেখ হাসিনা) আমাকে বলে যাননি।
উনি বলেছেন, বঙ্গভবনে তিনি অপেক্ষা করেছেন সকাল থেকে। ১১টার পর বলা হলো উনি বঙ্গভবনে আসবেন না, সাবেক প্রধানমন্ত্রী। উনি (রাষ্ট্রপতি) তো এটাই বলেছেন, উনি তো বলেন নাই যে পদত্যাগ পত্র পেয়েছেন, কি পান নাই। উনি বলেছেন, এটা মীমাংসিত ইস্যু। রিপোর্টের মধ্যে কোনো কন্ট্রাডিকশন আছে বলে তো আমি মনে করিনা।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র ইস্যুতে অনেকেই ষড়যন্ত্র খুঁজছেন– এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে মতিউর রহমান বলেন, ‘এটা ষড়যন্ত্র কেন? আপনি অবাধ তথ্য প্রবাহ চান, আবার ষড়যন্ত্রও দেখতে চান, তাহলে তো হবে না। কারণ হচ্ছে আড়াই মাস কেন? আড়াই বছর পরেও বিতর্ক হতে পারে। কারণটা হচ্ছে যে একটা কৌতূহল থেকে। যেহেতু সজীব ওয়াজেদ জয় বললেন যে পদত্যাগ করেন নি। একবার বললেন করেছেন। মানুষের মধ্যে একটা বিভ্রান্তি ছিল। আর এই কৌতূহল থেকেই আমার প্রশ্ন করা।’
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্রের সঙ্গে সাংবিধানিক সংকটের কোনো সম্পর্ক নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিতর্ক করলে, অনেক কিছু নিয়েই বিতর্ক করা যায়। প্রধানমন্ত্রী তো এখানে ছিলেন না, তিনি তো চলে গেছেন। তারপর বিশেষ রেফারেন্সের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট মতামত দিয়েছে যে সরকার গঠন করা যেতে পারে। সরকার গঠিত হয়েছে। হ্যাঁ, হার্ড কপিটা থাকতে হবে। হার্ড কপি ছিল না, এটাই সত্য। আর এটাই যে একদম সত্য, এটা না হলে চলবে না বা সরকারের যোগ্যতা থাকবে না অথবা এই সরকার অবৈধ হয়ে যাবে, এটা মনে করার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করিনা।’
পদত্যাগপত্রের ইস্যু অন্তর্বর্তী সরকারই মীমাংসা করতে পারে জানিয়ে মতিউর রহমান বলেন, ‘যারা সরকারে আছেন তারাই তো এটার মীমাংসা করতে পারেন। তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) কাছে যদি দালিলিক প্রমাণ থাকে, তাহলে তারা সেটা সামনে আনতে পারেন। আমার ফাইন্ডিংস হচ্ছে দালিলিক কোনো প্রমাণ নেই। মহামান্য রাষ্ট্রপতি এটা আমাকে বলেছেন, তার কাছে যায়নি (পদত্যাগপত্র)। কিন্তু উনি তো এটা বলেন নি যে পদত্যাগ অবৈধ, এটা ঠিক না। বঙ্গভবন থেকে যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে মীমাংসিত ইস্যু নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। উনি যথার্থই বলেছেন।’
মতিউর রহমান আরও বলেন, ‘উনি তো চলে গেছেন এটাই ঐতিহাসিক সত্য। বিতর্কের কিছু নেই। কিন্তু এটা কপি তো কোথাও থাকতে হবে। আমার ফাইন্ডিংসে আমি পাইনি। এখন যাদের কাছে আছে তারা দিলেই পারে।’