33 C
Dhaka
Sunday, April 20, 2025

সাড়ে ১৫ বছরের অন্যায়ের বিচার: অভিযানের প্রথম ধাপে নেয়া হবে শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের অভিযোগ

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) গত সাড়ে ১৫ বছরে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ওপর হওয়া জুলুম, অন্যায় ও নির্যাতনের বিচার করতে এগিয়ে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তদন্ত কমিটি গঠনের পর শুরু হয়েছে প্রথম ধাপের অভিযোগ গ্রহণ। প্রথম ধাপে শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের অভিযোগ গ্রহণ করা হবে।

অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি, র‍্যাগিং, ইভটিজিং, গেস্ট রুমে নির্যাতন, সিট বাণিজ্য এবং চাঁদাবাজিসহ সব ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে পারবেন। আগামী ১০ নভেম্বরের মধ্যে নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করে তদন্ত কমিটির নিকট অভিযোগ দায়েরের অনুরোধও জানানো হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিয়ে এই অভিযোগ কার্যক্রমে তাদের সহযোগিতা কামনা করে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে তদন্ত কমিটি। বুধবার (৯ অক্টোবর) বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির সদস্যদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের এক মত বিনিময় সভায় ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তদন্ত কমিটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়ের আলোচনা কক্ষে ওই মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন তদন্ত কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. জি. এম মুজিবর রহমান, সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার, ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীমসহ তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ এবং তদন্ত কমিটির উপদেষ্টা ময়মনসিংহ জজ কোর্টের এডভোকেট মোঃ খালেদ হোসেন টিপু।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বৈরাচারী সরকারের শাসনামলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হওয়া শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি, র‍্যাগিং, ইভটিজিং, গেস্ট রুমে নির্যাতন, সিট বাণিজ্য এবং চাঁদাবাজিসহ সকল অন্যায়নের সুষ্ঠু বিচারের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদেরকে আভিযোগ দায়ের করার আহ্বান জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। গত সাড়ে ১৫ বছর সময়কালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা এ অভিযোগ জানাতে পারবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে অনলাইন ফর্ম পূরণ, অভিযোগ পত্রের ফর্ম ডাউনলোড করে হাতে পূরণ বা সরাসরি ফর্মটি হাতে লিখে প্রশাসন ভবন, ছাত্র বিষয়ক বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে স্থাপিত নির্দিষ্ট অভিযোগ বাক্সেও জমা দিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। এ লক্ষ্যে আজ (বুধবার) ভবনগুলোর সামনে মোট তিনটি অভিযোগনামা গ্রহণ বাক্স স্থাপন করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের পরিচয় এবং সার্বিক গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়েও আশ্বাস দিয়েছেন তদন্ত কমিটির সদস্যবৃন্দ। পাশাপাশি, অভিযুক্ত বাক্তি/ব্যক্তিবর্গ-কে চিহ্নিত করে শাস্তির সুপারিশের উদ্দেশ্যে আগামী ১০ নভেম্বরের মধ্যে নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করে তদন্ত কমিটির নিকট অভিযোগ দায়েরের অনুরোধও জানানো হয়েছে।

সভায় তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা ভিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মনীতি অনুযায়ী যে অপরাধগুলোর বিচার আমরা করতে পারব সেগুলো আমরা করার চেষ্টা করব। আমাদের সাথে আইনজীবি প্যানেল ও থাকবে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী বিষয়টি ফৌজদারি মামলার অন্তর্ভুক্ত হলে সেভাবে আগানো হবে।

অন্যায়কারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হলে তার সনদ বাতিল বা তার কর্মক্ষেত্রে নোটিশ পাঠিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চলমান শিক্ষার্থী অন্যারকারী হলে ছাত্রত্ব বাতিল, সাময়িক বহিষ্কার বা বহিষ্কারের বিষয়গুলো আসবে। আমরা মূলত চাই একটি নজির তৈরি করতে যাতে পরবর্তীতে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আর এধরনের অন্যায় করার সাহস না পায়।’

উপস্থিত সদস্যরা আরও জানান, আলাদা আলাদা কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো হলেই যাবেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একেবারে কাছে গিয়ে আলোচনা করবেন তারা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরির জন্য এবং তাদেরকে অভিযোগ প্রদানের জন্য অনুপ্রেরণা দেয়া হবে।

শিক্ষার্থীরা যাতে কোনো প্রকার ভয় না পায় সে বিষয়টিও দেখা হবে। তবে শিক্ষার্থীদের দেওয়া অভিযোগগুলোও খুঁটিয়ে দেখা হবে। ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে মিথ্যা অভিযোগ দিলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সভায় তদন্ত কমিটির সভাপতি ও এগ্রোফরেস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. জি. এম মুজিবর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ন্যায় বিচার পাইয়ে দেওয়ার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। এজন্য সকল ধরনের প্রতিকূলতা আমরা মেনে নিতে রাজি আছি।’

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের জোরালো দাবির প্রেক্ষিতে স্বৈরাচার সরকারের আমলে বিগত সাড়ে ১৫ বছরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘঠিত সকল প্রকার দুর্নীতি, জুলুম-নির্যাতন এবং আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের বিষয় তদন্ত করে সুপারিশ বা তদন্ত প্রতিবেদন প্রদানের জন্য তদন্ত কমিটির গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন।

গত ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোফরেস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. জি. এম মুজিবর রহমানকে সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা ভিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকারকে সদস্য সচিব করে মোট ২৬ সদস্যের ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।ময়মনসিংহ জজ কোর্টের এডভোকেট মো. খালেদ হোসেন টিপুকে উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়।

সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ