চোর সন্দেহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে গণপিটুনিতে মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জল হোসেনকে (৩২) হত্যার অভিযোগে করা মামলায় আটক হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ শিক্ষার্থী। পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ছয় শিক্ষার্থী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিন ধাপে ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী তোফাজ্জলকে মারধরে অংশ নেন।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেন এই ছয় শিক্ষার্থীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে রাত ৯টার দিকে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়া ছয় শিক্ষার্থী হলেন, শিক্ষার্থী হলেন—ঢাবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জালাল মিয়া, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন মিয়া, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. মোত্তাকিন সাকিন এবং আল হুসাইন সাজ্জাদ, আহসানউল্লাহ ও ওয়াজিবুল আলম নামের তিন শিক্ষার্থী। তারা সবাই ফজলুল হক মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র।
তাদের মধ্যে জালাল মিয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপসম্পাদক। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে তিনি ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগে করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ছয় শিক্ষার্থীর জবানবন্দি অনুযায়ী তোফাজ্জল হোসেন হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন ১৫ থেকে ২০ জন। তারা সবার নাম প্রকাশ করেছেন। শিক্ষার্থীরা বলেছেন, চোর সন্দেহে তিন দফায় তোফাজ্জলকে মারধর করা হয়।
তারা বলেছেন, ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে ছাত্রদের ছয়টি মুঠোফোন ও মানিব্যাগ চুরি হয়েছিল। তোফাজ্জল সেদিন রাত ৮টার দিকে হলের ফটক দিয়ে মাঠের ভেতরে যান। তখন কয়েকজন শিক্ষার্থী চোর সন্দেহে তাকে আটক করে হলের অতিথিকক্ষে নিয়ে যান।
পরে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাকে স্টাম্প দিয়ে মারধর করা হয়। এরপর তাকে হলের ক্যানটিনে নিয়ে রাতের খাবার খাওয়ানো হয়। খাওয়া শেষে আবার তাকে হলের অতিথিকক্ষে এনে ব্যাপক মারধর করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। তিন ধাপে ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী তোফাজ্জলকে মারধরে যুক্ত হয়।
রাত ১২টার দিকে হলের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষক তোফাজ্জলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তারা জানতে পারেন চিকিৎসাধীন অবস্থায় তোফাজ্জল মারা গেছেন।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। পরে বিকেলে ঢাবির প্রক্টরিয়াল টিম ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় অভিযুক্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এদিকে, আটক ৬ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। এছাড়াও হল থেকে তাদের সিট বাতিল করা হয়েছে। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানতে চাইলে ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আটক ৬ জনকে সিট বাতিল করে হল প্রভোষ্ট চিঠি দিয়েছে। এ ছাড়াও অভিযুক্ত ৬ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হচ্ছে। আগামীকাল চিঠি ইস্যু হবে। তদন্ত প্রতিবেদন আসলে তখন আরো কঠোর ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে।