25 C
Dhaka
Sunday, November 24, 2024

ভারতের মদদে পাহাড়ে প্রতিবিপ্লবের আশঙ্কা

ছাত্র-জনতার বিপ্লবে স্বৈরাচার বিদায় হয়েছে। এটা আমাদের জাতীয় ইতিহাসে অন্যতম বড় বিজয়। কিন্তু সেটি এখনো নিরাপদ কিংবা নিশ্চিন্ত হয়নি। পদে পদে ক্যু, ষড়যন্ত্রের নীলনকশার জাল আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলতে চাইছে বিপ্লবী সরকারকে।

বিচারবিভাগ, নির্বাহী বিভাগসহ সকল খাত গত সাড়ে ১৫ বছর হাসিনা শাহীর খুঁটি হিসেবে কাজ করেছে। এসব খাতে হাসিনার চাকর-বাকররা এখনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। নানা রদবদল করেও তাদের কিনারা করা সম্ভব হচ্ছে না।

আর সেই সুযোগে তারা যেভাবে পারছে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলতে বা ছাত্র-জনতার বিল্পবকে ব্যর্থ করে দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ৬ আগস্ট মধ্যরাতেই ক্যু করার পরিকল্পনা করা হয়, যা ভেস্তে যায় দেশপ্রেমিক ও বিচক্ষণ অফিসারদের তৎপরতায়।

এরপর বিচারবিভাগীয় ক্যু নস্যাৎ করে দেয় ছাত্র-জনতার প্রবল প্রতিরোধ। ভারত তার নিজের স্বার্থ রক্ষায় দীর্ঘদিন অবৈধভাবে বাংলাদেশের ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে শেখ হাসিনাকে। কিন্তু সেই ক্ষমতার মসনদ যখন চুরমার হয়ে গেছে, তখন শুধু শেখ হাসিনা নয়, বরং ভারতও দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এখন একের পর এক ষড়যন্ত্রের চোরাগলিতে ছুটে বেড়াচ্ছে তারা।

শুরুতে ভাড়াটে ডাকাত দিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লুটপাট চালিয়ে অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছে। কিন্তু নাগরিকদের সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে তা ব্যর্থ হয়েছে। পরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঠে নামিয়ে সংখ্যালঘু কার্ড খেলার অপচেষ্টা করেছে। সামাজিক এবং গণযোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে হাজারো গুজব ছড়িয়ে দাঙ্গা লাগানোর চক্রান্ত করেও সুবিধা করতে পারেনি।

এখনো তারা থামেনি। অতিবৃষ্টির সুযোগ নিয়ে রাতের অন্ধকারে উজানে দেওয়া সকল বাঁধের গেইট খুলে দিয়েছে। এতে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১২টি জেলার লক্ষ লক্ষ মানুষকে নজিরবিহীন বন্যায় ভাসিয়েছে। সর্বস্তরের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

শুধু তাই নয়, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই দেশের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের এজেন্টদের উসকানি দিয়ে মাঠে নামানো হয়েছে। দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও নানা দাবি-দাওয়ার ফিরিস্তি নিয়ে শাহবাগ, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন, সচিবালয় ঘিরে বিক্ষোভ মিছিল যেন থামছেই না। ইতোমধ্যে পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ-কর্মচারী, গার্মেন্ট শ্রমিক, চৌকিদার-দফাদার, তথ্য আপা, ম্যাটস, আনসার, পল্লীবিদ্যুৎ, রিকশাওয়ালাসহ বিভিন্ন সেক্টরের লোকজন তাদের দাবি আদায়ের কর্মসূচি দিয়েছে।

আরো যে কত সেক্টর সামনে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে তা হয়তো এই মুহূর্তে চিন্তাও করা সম্ভব না। এ কথা সত্য যে, যারা তাদের বঞ্চনার ইতিহাস সামনে রেখে নানা দাবি বাস্তবায়নের আন্দোলনে নেমেছে বা নামছে তাতে কমবেশি যৌক্তিকতা আছে। তবে একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের সাড়ে ১৫ বছর যখন তারা চুপ করে থাকতে পারল, তখন নতুন সরকারকে তারা কেন এক মাস সময়ও দিতে পারল না, প্রশ্নটা সেখানেই।

আগের সরকার সকল সেক্টরে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, লুটপাট, অর্থপাচারের মাধ্যমে গোটা দেশটাকেই ধ্বংস করে গেছে। তখন যারা মুখ ফুটে একটি কথাও বলেনি বরং ফ্যাসিস্ট সরকারের সহায়ক ভ‚মিকা পালন করেছে এখন তাদের সব বঞ্চনার দাবি নিয়ে তাড়াহুড়া করা মোটেই স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়, এটা বুঝতে কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

যাহোক, সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী ও পৃষ্ঠপোষকদের সকল চক্রান্ত এখন পর্যন্ত সফলভাবে মোকাবিলা করে স্বপ্নের আগামী বাংলাদেশ গঠনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে ছাত্র-জনতার মিলিত শক্তি। তাদের এই সফলতা ধারাবাহিক রাখতে হলে সামনে আরো বেশি সচেতন এবং কৌশলী হয়ে এগুতে হবে। কেননা, একের পর এক ষড়যন্ত্র করে ব্যর্থ হয়েও ভারত তার চক্রান্তের জাল বিস্তার কখনো থামাবে, সেই চিন্তা করা বৃথা। ১৯৪৭ থেকেই তারা বিরামহীনভাবে ষড়যন্ত্রের জাল বুনে যাচ্ছে, কখনো থামেনি। তাদের লোকসভার দেয়ালে গ্রেটার হিন্দুস্তানের যে মানচিত্র এঁকে রেখেছে সেখানে বাংলাদেশ নামের কোনো রাষ্ট্রের অস্তিত্ব নেই। তাদের এই মানচিত্র পূরণ করতে হলে বাংলাদেশের অস্তিত্বকে বিলীন করতেই হবে; যে কথা কোনো রাখডাক না রেখেই বিজেপি এবং আরএসএস নেতারা প্রায়ই বলে থাকেন।

এবারো তাদের মুখ থেকে বাংলাদেশে সরাসরি হামলা চালানোর দাবি করতে দেখা গেছে। কিন্তু আজকের বিশ্ববাস্তবতায় চাইলেই অন্য একটি দেশ দখল করা সহজ কোনো ব্যাপার নয়। সে কারণেই তারা সব সময় চায় এখানে অন্তত তাদের আজ্ঞাবহ সরকার থাকুক। আর আজ্ঞাবহ ও একান্ত অনুগত হিসেবে তাদের প্রথম এবং একমাত্র পছন্দের দল আওয়ামী লীগ।

বিপ্লবের পর মুখে মুখে বা ক‚টনীতির ভাষায় যাই বলুক না কেন, আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুতি তারা কোনোভাবেই হজম করবে না। বরং, সম্ভাব্য সকল সুযোগকে কাজে লাগাবে। বাঁধ ছেড়ে দিয়ে বন্যায় ভাসানোর পর হুট করে খাদ্যশস্য রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে।

সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ