জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মারধরের শিকার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত শামীম সাভারের আশুলিয়ার কাঠগড়া মোল্লাবাড়ীর ইয়াজ উদ্দিন মোল্লার ছেলে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
আশুলিয়া থানা-পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি (শামীম) মারা গেছেন।’
গত ১৫ জুলাই রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ক্যাম্পাস শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে মারধর করা হয়। বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা ফটক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির হাতে তুলে দেয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা ফটকসংলগ্ন একটি দোকানে অবস্থান করছিলেন শামীম মোল্লা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সেখানে গিয়ে তাকে আটক করে গণধোলাই দেন। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম উপস্থিত হয়।
একপর্যায়ে নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় তাকে নিরাপত্তা শাখায় নিয়ে আসা হয়। এরপর প্রক্টরিয়াল টিমের খবর দিলে আশুলিয়া থানা-পুলিশের একটি দল আসে। এ সময় পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল টিম শামীমকে ১৫ জুলাই রাতে উপাচার্যের বাসভবনে হামলার ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে তাকে আশুলিয়া থানা–পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শামীম মোল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের এলাকায় থাকেন। গত ১৫ জুলাই রাতে উপাচার্যের বাসভবনে অবস্থানরত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলায় তিনি যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার প্রধান কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন বলেন, বিকেলে খবর পেয়ে নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। সেখানে ৩৯ ব্যাচের সাবেক ওই ছাত্রকে উদ্ধার করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসা হয়। পরে তার সঙ্গে কথাবার্তা বলে আগের মামলায় তাকে আশুলিয়া থানা–পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘আমাদের এখানে যখন আনা হয় তখন আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে তিনি মৃত। অর্থাৎ তাকে আমাদের এখানে মৃত অবস্থায় আনা হয়। তার শরীরে সেরকম গুরুতর কোনো ক্ষত পাওয়া যায়নি। আর কী কারণে মারা গেছে এটা জানার জন্য ময়নাতদন্ত করতে হবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, প্রক্টর অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় তাকে আশঙ্কাজনক মনে হয়নি। এমনকি তিনি নিজে হেটে পুলিশের গাড়িতে উঠেছেন। এরকম আসামিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করার বিষয়টি রহস্যজনক। নিশ্চিত না হয়ে এ বিষয়ে মন্তব্য করা উচিত বলে মনে করছি না।