সেনাবাহিনী নেতাকর্মীদের ওপর হামলাকারী সব অপরাধী লুটেরা সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনবে বলে প্রত্যাশা করেছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। সন্ত্রাসীদের নাম উল্লেখ করে ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে তাদের পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে নিকটস্থ সেনাক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দলটি।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টার দিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে করা একটি পোস্টে এসব কথা জানান।
পোস্টটিতে বলা হয়েছে, আমরা সারা দেশ থেকে খবর পেয়েছি বেশিরভাগ থানাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের বিষয়ে সাধারণ ডায়েরিও করতে দেওয়া হয়নি।
এতে আরও বলা হয়, যেহেতু সেনাবাহিনীকে মেজিস্ট্রেসি দেওয়া হয়েছে, তাই এই অপরাধীদের থামাতে এখন সেনাবাহিনীর কাছেই অভিযোগ দেওয়ার বিকল্প নেই।
উল্লেখ্য, গতকাল মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে সারা দেশে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি (বিচারিক) ক্ষমতা দিয়েছে সরকার। আগামী ৬০ দিন (দুই মাস) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসাররা এই বিচারিক ক্ষমতা কাজে লাগাতে পারবেন। এর ফলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অপরাধীকে সাজা দিতে পারবেন তারা।
এ প্রসঙ্গে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, আমাদের এই আদেশ দেওয়া হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ করব। তিনি সবার সহযোগিতাও চেয়েছেন।
জনপ্রশাসনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এ সিদ্ধান্ত মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হয়েছে। আগামী দুই মাস এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে। দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮-এর ১২(১) ও ১৭ ধারা অনুযায়ী এই ক্ষমতা অর্পণ করা হলো।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ফৌজদারি দণ্ডবিধি ১৮৯৮-এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ এবং ১৪২ ধারা অনুযায়ী সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা তাদের বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।
আইনের ৬৪ ধারায় বলা আছে, কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে যদি অপরাধ সংঘটিত হয়, তাহলে তিনি নিজেই গ্রেপ্তার করতে পারবেন অথবা অপরাধীদের গ্রেপ্তারের আদেশ দিতে পারবেন। অপরাধীকে হেফাজতে রাখতে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিতে পারবেন।
৬৫ ধারা অনুযায়ী, যে ম্যাজিস্ট্রেট গ্রেপ্তার বা গ্রেপ্তারের আদেশ দিতে পারবেন, তিনি একই সময়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করতে পারবেন।
ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ১০০ ধারা অনুসারে, বেআইনিভাবে আটক ব্যক্তির তল্লাশির জন্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট আদেশ দিতে পারবেন। ওই ম্যাজিস্ট্রেটের এরূপ বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে, কোনো ব্যক্তিকে এরূপ অবস্থায় আটক রাখা হয়েছে যে আটক রাখা অপরাধের শামিল, তখন তিনি তল্লাশি পরোয়ানা প্রদান করতে পারবেন এবং যার প্রতি পরোয়ানাটি নির্দেশিত, তিনি পরোয়ানা অনুসারে ওই আটক ব্যক্তির জন্য তল্লাশি করতে পারবেন এবং সেই ব্যক্তিকে পাওয়া গেলে তাকে অবিলম্বে কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করতে হবে এবং অবস্থানুসারে যেরূপ মনে করেন সেরূপ উপযুক্ত আদেশ দেবেন।
ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ১০৭ ধারা অনুসারে, যখন কোনো জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা অন্য কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে জানানো হয় যে, কোনো ব্যক্তি সম্ভবত শান্তি ভঙ্গ করতে পারে বা সর্বসাধারণের প্রশান্তি বিনষ্ট করতে পারে অথবা
এমন কোনো অন্যায় কাজ করতে পারে, যার ফলে সম্ভবত শান্তি ভঙ্গ হতে পারে বা সর্বসাধারণের প্রশান্তি বিঘ্ন হতে পারে, তখন ওই ম্যাজিস্ট্রেট যদি মনে করেন যে, ব্যবস্থা গ্রহণের পর্যাপ্ত পদ্ধতিতে ওই ব্যক্তিকে কেন এক বছরের অনধিককাল শান্তি রক্ষার জন্য জামিনদারসহ বা ব্যতীত একটি মুচলেকা সম্পাদনের আদেশ দেওয়া হবে না, তার কারণ দর্শাতে বলবেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ঢাকাসহ সারা দেশে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে গত ১৯ জুলাই রাতে সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও কারফিউ জারি করেছিল তৎকালীন সরকার।
এরপর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। তিন দিনের মাথায় ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এখনো সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে।