তীব্র আন্দোলনে সরকার পরিবর্তনের পর মন্ত্রী-এমপিসহ অনেক রাঘব বোয়ালদের গ্রেপ্তার বা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার তথ্য প্রকাশ্যে আসলেও আড়ালেই রয়ে গেছেন সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ। এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হলেন না কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে।
অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন করছেন ডিবি হারুন এখন কোথায় আছেন। তিনি দেশে আছেন কিংবা জীবিত আছেন কি না এসব প্রশ্ন করছেন। হারুনের অবস্থান নিয়ে পুলিশ কিংবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো কিছু জানায়নি।
তবে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ এখনো জীবিত আছেন এবং দেশেই আছেন। সরকার পতনের পর দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন হারুন। কিন্তু পালাতে না পেরে তিনি দেশেই অবস্থান করছেন। সরকার পতনের পর মারধরের শিকার হয়েছিলেন তিনি। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।
ডিএমপির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ডিএমপি পুলিশের নিজস্ব হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে হারুনের ছবি দেখা গেছে। তিনি অসুস্থ অবস্থায় সিএমএইচে ভর্তি ছিলেন। এরপর ছবিটি ডিলিট করে দেওয়া হয়। তবে আমাদের নিশ্চিত করা হয়েছে তিনি সিএমএইচে ছিলেন। তার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে এখনো পরিষ্কার জানা না গেলেও তিনি ঢাকাতেই আছেন বলে জানতে পেরেছি।
পুলিশের দায়িত্বশীল আরেকটি সূত্র জানায়, সরকার পতনের পরদিন ৬ আগস্ট হারুন অর রশীদের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ফোন দেওয়া হলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সেদিন হারুন জানান, তিনি দেশেই আছেন, বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেননি। ৬ আগস্ট তিনি অফিসেও গিয়েছিলেন বলে দাবি করেন। পরদিন ৭ আগস্ট থেকে পুলিশের এই কর্মকর্তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
এদিকে গত ৮ আগস্ট হাসপাতালের বেডে চিকিৎসাধীন এক ব্যক্তির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। চেহারা মিল থাকায় অনেকে ধারণা করেন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ব্যক্তিটি আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদের। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছবিটি আসলে হারুন অর রশীদের নয়।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত ৮ থেকে ১০ আগস্টের মধ্যে কোনো একদিন কিছু লোক পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদকে মারধর করেছেন। পুলিশের কিছু অফিসারও সিভিল পোশাকে হারুনকে মারধর করেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। পুলিশ কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের বিষয়টি প্রশাসনের বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে সাধারণ মানুষ নাকি পুলিশ সদস্যরা মারধর করেছে, সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরে হারুনকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি করা হয়।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। প্রধানমন্ত্রী ভারতে চলে যাওয়ার পরও পুলিশ সদস্যরা অনেকে এ খবর জানতেন না। পুলিশের আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পুলিশ সদরদপ্তরে ছিলেন। আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদও তখন পুলিশ সদরদপ্তরে ছিলেন।
সরকার পতনের পর বিক্ষুব্ধ জনতা যখন পুলিশ সদরদপ্তরের দিকে এগিয়ে আসে তখন হারুন অর রশীদ পুলিশ সদরদপ্তরের দেওয়াল টপকে মুখে মাস্ক পরে বের হয়ে যান বলে গুঞ্জন রয়েছে। এসময় তিনি রিকশায় চড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান বলেও একটি সূত্র দাবি করেন।
আরেকটি সূত্র অবশ্য জানিয়েছে, হারুন পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বের হয়ে সোজা চলে যান ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে। সেখান থেকে দেশের বাইরে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন।
সূত্র-ঢাকা পোস্ট