নির্বাচনগুলোতে জালিয়াতির একটা রহস্য আছে। রহস্যটা হচ্ছে, শুধু যে ছাপ্পা ভোট দিচ্ছে তা না। খেলাটা চলছে প্রিসাইডিং অফিসারের দ্বারা।’ ঠাকুরগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রচারে এমন মন্তব্য করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহসম্পাদক কামরুল হাসান খোকন।
বুধবার (১৫ মে) সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে এ মন্তব্য করেন তিনি। খোকন বর্তমানে ঠাকুরগাঁও পৌরসভা ওর্য়াড আওয়ামী লীগের সদস্য।
তার বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রিসাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে আমাদের নেতারা ২শ পাতার একটি করে বই (ব্যালট পেপার) দেন। জোহরের নামাজের বিরতির সময় সিল মেরে এই বইয়ের পাতাগুলো বক্সে ঢুকানো হতো। এভাবে প্রার্থী নির্বাচনে জিতে যায়।
তিনি আরও বলেন, মানুষের ভোট হচ্ছে পবিত্র আমানত। আমানতকে যারা খেয়ানত করেছে তাদের জবাব দেওয়ার সময় এসেছে আগামী ২১ তারিখের নির্বাচনে। ১৫ বছর আমরা ক্ষমতায় আছি। নির্বাচন এলে আমরা জনগণের কাছে গুছিয়ে গুছিয়ে মিথ্যা কথা বলি। এত গুছিয়ে মিথ্যা বলি, জনগণ বিভ্রান্ত হয়।
খোকন বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঠাকুরগাঁওয়ে একজন নয়া মৌলভি সাজছে। মসজিদে মসজিদে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। নানা রকম ফন্দি করছেন। আরেকজন প্রার্থী মন্দিরে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। মানুষের কাছে কেউ যায় না। ১৫ বছর ধরে আমরা ক্ষমতায়। অথচ, ঠাকুরগাঁওয়ে কৃষিভিত্তিক একটি ইন্ডাস্ট্রি আমরা গড়ে তুলতে পারিনি। অনেক আগে এ জেলায় একটি বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এখন পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। এই বিমানবন্দরটিও আমরা চালু করতে পারিনি। আমাদের এই জেলায় অনেক রাস্তা এখনো কাঁচা। যেখানে সাইকেল তো দূরের কথা পায়ে হেঁটে পর্যন্ত যাওয়া যায় না। আমাদের নেতাগুলো ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনছে। আবার ঢাকায় যাদের বাড়ি হয়েছে তারা আবার দেশের বাইরে গিয়ে বাড়ি কিনছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে আমরা কী দিতে পেরেছি এ দেশের জনগণকে? টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও আমরা কী করতে পেরেছি জনগণের জন্য? এভাবে দেশ চালানো নিয়ে আমাদেরও সংশয় আছে। আমাদেরও বুকে রক্তক্ষরণ হয়। আমরা মানুষের কাছে যায় না, মানুষকে ধোকা দিই, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিই।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায় বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে নির্বাচনী সভায় এমন বক্তব্য কোনোভাবেই আশা করা যায় না। এ বিষয়ে তাকে সর্তক করা হবে।
তবে কামরুল হাসান বলেন, ভোটের প্রতি মানুষের আস্থা কমে গেছে। আমি আওয়ামী লীগ করি বলে এটা তো অস্বীকার করতে পারি না। ভোটারের ক্ষোভ কমিয়ে এনে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করতেই এমন বক্তব্য দিয়েছি।