জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে শ্বশুরকে জন্মদাতা পিতা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেওয়া অভিযোগ উঠেছে পুত্রবধূ মাফিয়া খাতুন (মিতু) নামে এক সহকারি শিক্ষিকার বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে এমন অভিযোগ মিলেছে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের ৬১নং মইশাবাদুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
রবিবার (০৮ সেপ্টেম্বর) দিনব্যাপী ঐ বিদ্যালয় এবং এলাকাবাসীর মাধ্যমে এঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়।
অনুসন্ধান ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, মৃত বীর মুক্তিযুদ্ধা আব্দুর রহমান ভাটারা ইউনিয়ন ৪নং ওয়ার্ডের জুলারখুপি গ্রামের বাসিন্দা। তার পরিবারে রয়েছে দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় মেয়ে নাম রহিমা আক্তার ও দ্বিতীয় ছেলের নাম শফিকুল ইসলাম (খোরশেদ) এবং ছোট ছেলের নাম খায়রুল ইসলাম (খোকন মিয়া)।
বীর মুক্তিযোদ্ধার ছোট ছেলে খায়রুল ইসলাম ওরফে খোকন মিয়া মাদারগঞ্জ উপজেলার সরদাবাড়ী গ্রামের হাসান আলীর মেয়ে মাফিয়া খাতুন মিতু’র সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
বিবাহের সময় মাফিয়া খাতুন মিতু রায়েরছড়া সরর্দাবাড়ী মডেল একাডেমী স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন। নবম শ্রেণীতে পড়াশোনাকালীন সময়ে এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন ফরর্মে (নং- ৬৫১৮৯৯) তাহার পিতার নাম (হাসান আলীর) পরিবর্তে মুক্তিযোদ্ধা শ্বশুর (আব্দুর রহমান) এর নাম লিপিবদ্ধ করেন।
এদিকে শুরুতে তিনি ৫ম-৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন তার তার পিতা মো. হাসান আলীর পরিচয়ে। পরে তারপর নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রেও তাহার পিতার নামের পরিবর্তে শ্বশুরের নাম ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয় পত্র করেন। যাহার জাতীয় পরিচয়পত্র (নং-৮২২২০৯৫৬১৭)। পরে ২০১২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তখন থেকে সার্টিফিকেট অনুযায়ী সে জন্মদাতা পিতা হাসান আলীর পরিবর্তে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের জন্মদাতা মেয়ে হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয়।
সেই সুবাদে মাফিয়া খাতুন (মিতু) মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করে প্রাথমিক বিদ্যালয় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১৭ জানুয়ারি ১৬ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি বর্তমানে উপজেলার ৬১নং মইশাবাদুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। কাগজপত্রের সেই সূত্রে ইসলামিক ভাবে আপন ভাইয়ের সাথে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে দাম্পত্য জীবন যাপন করছে তারা। এতে তাদের ঘরে দুটি সন্তানের জন্ম হয়।
এবিষয়ে মাফিয়া খাতুন মিতুর (ভাসুর) মো. শফিকুল ইসলাম খোরশেদ মুঠোফোনে বলেন, সরকারি শিক্ষিকা মিতু আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী। সে তার কাগজপত্রে কিভাবে আমার বাবার নাম ব্যবহার করতে পারে। আমার বীর মুক্তিযুদ্ধা পিতা তার জন্মদাতা হতে পারে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছু স্থানীয় অনেকেই বলেন, নিজের বাবার নাম বাদ দিয়ে শ্বশুরকে জন্মদাতা পিতা বানিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে যে শিক্ষক মহৎ পেশায় নিয়োজিত আছে তার কাছ থেকে কোমলমতি শিশুরা কি শিখতে পারে। জালিয়াতির এমন ঘটনার ব্যবস্থা গ্রহণে জোর দাবি জানান তারা।
অভিযুক্ত শিক্ষিকার স্বামী খায়রুল ইসলাম খোকনের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে এবিষয়ে কিছু বলতে রাজি নয়।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত সহকারি শিক্ষিকা মাফিয়া খাতুন মিতুর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি এসব বিষয়ে কথা বলতে অনিহা প্রকাশ করেন এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি রাজি নয় বলেও মত প্রকাশ করেন।
মইশাবাদুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তার বলেন, ‘কিভাবে তিনি চাকরি নিয়েছেন সেটা আমি জানি না। তবে তার যোগদান পত্রটি আমাদের কাছে আছে।
এব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাহিদা ইয়াসমিন জানান, ‘এবিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঐ শিক্ষিকার সব কাগজপত্র চেয়েছি। অতিদ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।