বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের ৩১তম ব্যাচের কর্মকর্তা ও লালমনিরহাটের পাটগ্রামের সরকারি জসমুদ্দিন কাজী আব্দুল গণি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুকিব মিয়া অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগ দাবিতে আওয়ামী লীগের লিফলেট বিতরণ করেছেন। গতকাল শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লিফলেট বিতরণ করেন তিনি।
মুকিব মিয়া নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে লিফলেট বিতরণের ছবি পোস্ট করেছেন । এ নিয়ে অন্তত ১৩টি খবরও শেয়ার করেছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মুকিব মিয়া ছাত্রলীগের সোহাগ-নাজমুল কমিটির গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
এসব লেখাকে ২০১৮ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার ৩(খ) ধারা অনুযায়ী আচরণ লঙ্ঘন উল্লেখ করে গত ২০ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ মুকিব মিয়ার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেছে। কেন তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না, তা ১০ দিনের মধ্যে জানাতে নোটিশ দিয়েছে। আত্মপক্ষ সমর্থনে তিনি ব্যক্তিগত শুনানিতে ইচ্ছুক কিনা, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
সরকারি চাকরিজীবীর সামাজিক মাধ্যমে সরকারের সমালোচনা করার সুযোগ না থাকলেও ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কড়া সমালোচনা করে মুকিব মিয়া ফেসবুকে লিখেছেন, ৫ আগস্টের পর ‘লোভে পাপ, পাপে ইউনূস’; ‘ইউনূস বাহিনীর নির্যাতন নাৎসি হিটলারকেও হার মানায়’; ‘ইউনূসের নাৎসি বাহিনীর ছোবল থেকে রেহাই পেল না শিক্ষার্থীরা’; ‘বাংলাদেশকে গৃহযুদ্ধে ঠেলে দিতে মব সংস্কৃতি চালু করেছে অবৈধ ইউনূস সরকারের উপদেষ্টারা। জাতিকে প্রস্তুত হবে। অরাজকতা রুখতে হবে’; ‘বিয়ে করতে, প্রেম করতেও ট্যাক্স দিতে হবে ইউনূসকে। কারণ সে সুদি কারবারি’; ‘ইউনূস ঠেলা সামলা’; ‘জঙ্গি ইউনূসের দিন শেষ’।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় টানা ১০ বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরে ছিলেন মুকিব। তাঁর সহকর্মীরা জানিয়েছেন, সে সময়েও নিয়মিত আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে অংশ নিতেন তিনি।
সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯-এর ২৫(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘সরকারি কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের বা রাজনৈতিক দলের কোনো অঙ্গসংগঠনের সদস্য হতে অথবা অন্য কোনোভাবে যুক্ত হতে পারবেন না অথবা বাংলাদেশ বা বিদেশে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে বা কোনো প্রকারের সহায়তা করতে পারবেন না।’ এ ধারা লঙ্ঘনের শাস্তি চাকরিচ্যুতি।
পরে গত ২১ অক্টোবর তাঁকে লালমনিরহাটের পাটগ্রামে বদলি করা হয়। জসমুদ্দিন কাজী আব্দুল গণি কলেজের অধ্যক্ষ মো. হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, মুকিব মিয়া গত সাড়ে তিন মাসে একবারও আসেননি। তিনি অনলাইনে যোগদানের আবেদন করেছিলেন। তা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু তিনি যোগদানের হার্ডকপি জমা দেননি। সম্প্রতি তিনি ৩ মাসের অসুস্থতাজনিত ছুটি চেয়ে আবেদন করেছেন। কিন্তু সঙ্গে চিকিৎসকের সুপারিশ, ব্যবস্থাপত্র, অসুস্থতার প্রমাণপত্র কিছুই দেননি। এর পর আর যোগাযোগ নেই।