ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আরও ১২ জন নেতাকে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) হাজির করা হয়। আদালতের এজলাসে বসেই টিস্যু পেপারে গোপন বার্তা লেখার অভিযোগ উঠেছে পলকের বিরুদ্ধে। এর আগে একই ধরনের অভিযোগ উঠে সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনির বিরুদ্ধে।
জানা যায়, আইনজীবীর মাধ্যমে টিস্যু পেপারে লেখা গোপন বার্তা পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন জুনাইদ আহমেদ পলক। শুনানি শুরু হওয়ার আগেই পলকের আইনজীবী তরিকুল ইসলামের কাছে কৌশলে টিস্যু পেপারটি হস্তান্তর করেন পলক। বিষয়টি নজরে এলে পুলিশের পক্ষ থেকে আইনজীবীকে সতর্ক করা হয়। তবে টিস্যু পেপারের বিষয়টি অস্বীকার করেন আইনজীবী।
পলকের আইনজীবী তরিকুল ইসলাম বলেন, টিস্যু পেপার দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা শুধুমাত্র ওকালতনামায় স্বাক্ষর নিয়েছি। যদিও আদালতে উপস্থিত একাধিক সূত্র দাবি করেছে, টিস্যু পেপার লুকিয়ে ফেলার বিষয়টি চোখ এড়ায়নি।
এর আগে, ২০ জানুয়ারি আদালতে একই কৌশলে টিস্যু পেপারে বার্তা লেখেন দীপু মনি। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কয়েক মিনিট ধরে টিস্যুতে লিখে তা এক ব্যক্তির (সম্ভবত আইনজীবী) হাতে তুলে দেন তিনি। এই ঘটনার ছবি তোলা এবং বার্তা হস্তান্তরের বিষয়টি নিয়ে তখন আদালতে ব্যাপক সমালোচনা হয়।
পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক বলেন, এজলাসে আসামিদের কোনো বার্তা আদান-প্রদান করার নিয়ম নেই। এসব কার্যকলাপ নজরে আসলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে দীপু মনির ঘটনায় তদন্ত চলছে। পলকের ঘটনাটি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হলো।
পলক আদালতে তার আইনজীবীদের কাছে অভিযোগ করেন, কারাগারে তাকে পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। অন্য আসামিদের ক্ষেত্রে এটি অনুমোদিত হলেও তার জন্য নিরাপত্তাজনিত অজুহাত দেখানো হচ্ছে। আদালতে এ নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আইনজীবীদের অনুরোধ করেন তিনি।
এদিকে, রাজনৈতিক বার্তা আদান-প্রদানের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পলকের আইনজীবীরা। তবে এজলাসে উপস্থিত অনেকেই বলছেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড আসামিদের পরিকল্পিত পদক্ষেপের অংশ।
নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, কারাগার থেকে কিছু শীর্ষ রাজনীতিক বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনায় লিপ্ত রয়েছেন। টিস্যু পেপারে বার্তা দেওয়ার ঘটনা তারই একটি উদাহরণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পিপি ওমর ফারুক এ প্রসঙ্গে বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ ধরনের বার্তা আদান-প্রদান হলে তা আইন ও আদালতের প্রতি অবমাননা। এ বিষয়ে আরও কড়া নজরদারি প্রয়োজন।
পলক ও দীপু মনির টিস্যু পেপারের বার্তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। কারাগার থেকে কী ধরনের বার্তা যাচ্ছে? এসব বার্তার মাধ্যমে কোনো ষড়যন্ত্র হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা।
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আদালতের কঠোর নজরদারির দাবি তুলেছেন বিশিষ্টজনেরা। এই ধরনের বার্তা আদান-প্রদান শুধু আইন-শৃঙ্খলার জন্য নয়, দেশের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি বলে মনে করছেন তারা।