শিক্ষার কোনো বয়স নেই, নেই কোনো বাধা। এমন বাণী হাদিসেও রয়েছে ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত বিদ্যার্জন কর’। দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের বাবা ঠিকাদার মো: বদিউল আলম (নাঈম) ও মা শারমীন আক্তার দম্পতি। মো: বদিউল আলমের (নাঈম) বর্তমান বয়স ৪৩ বছর ও শারমীন আক্তারের বর্তমান বয়স ৩৩ বছর।
এ দম্পতি চলতি বছরে (২০২৪) বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ঢাকার অধীনে কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন। মো: বদিউল আলম পেয়েছেন জিপিএ ৪ দশমিক ২৯ এবং শারমীন আক্তার পেয়েছেন জিপিএ ৪ দশমিক ৫। এ বয়সে এইচএসসি পাস করায় তারা নিজেরাসহ পরিবারের সবাই খুশি।
এর আগে গত ২০২২ সালে নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলার বিন্নাবাইদ দারুল উলুম দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল (এসএসসি) পাস করেন এ দম্পতি। তখন মো: বদিউল আলম নাঈম পেয়েছিলেন জিপিএ ৪ দশমিক ৯৫ ও শারমীন আক্তার পেয়েছিলেন জিপিএ ৫।
এ দম্পতি বিয়ের আগে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দিতে না পারলেও কয়েকবার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ব্যবসা ও সাংসারিক চাপে শেষপর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। শেষপর্যন্ত মনের জোর এবং স্বজনদের উৎসাহে পড়াশোনা করে এবার এইচএসসি ও এর আগে এসএসসি পাস করেছেন এ দম্পতি।
নতুন করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি মোটেও সম্ভাবনা ছিল না এ দম্পতির। ২০২০ সালে তৎকালীন কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া ইসলাম লুনা ও বড় মেয়ের উৎসাহে নতুন করে পড়াশোনা করার আগ্রহ জাগে তাদের। ওই বছর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিন্নাবাইদ দারুল উলুম দাখিল মাদরাসায় ভর্তি হন দু’জন।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে উত্তীর্ণ হওয়ার খবর পেয়ে তাদের মাঝে যেন আনন্দের বন্যা বইছে। নিজেরাও যেমন খুশি হয়েছেন, তেমনি তাদের ছেলে মেয়েরাও খুশি হয়েছেন।
মো: বদিউল আলম (নাঈম) কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতী ইউনিয়নের দ্বাড়িয়াকান্দি গ্রামের মো: কনু মিয়া ও মোছা: সাজেদা দম্পতির ছেলে। তিনি একজন ঠিকাদার। তিনি ১৯৯৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও আর পরীক্ষা দেয়া হয়নি তখন।
শারমীন আক্তার কুমিল্লা জেলার হোমনা থানার মঙ্গলকান্দি গ্রামের মো: ইসমাইল হোসেন ও মায়া বেগম দম্পত্তির মেয়ে। ২০০৮ সালে নবম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত অবস্থায় মো: বদিউল আলমের (নাঈম) সাথে বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর ২০১০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও বড় মেয়ে বুশরা আক্তার বীথি তার গর্ভে আসায় আর পরীক্ষা দিতে পারেননি। তখন থেকেই লেখা পড়া বন্ধ হয়ে যায় তার।
তাদের বড় মেয়ে বুশরা আক্তার বীথি এবার স্থানীয় ছয়সূতী ইউনিয়ন হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী ও মেজো ছেলে রেদোয়ান আলম সিয়াম একই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। সবার ছোট মেয়ে তাসনীম (৫) এখনো স্কুলে ভর্তি হয়নি।
স্থানীয়রা বলেন, এই বয়সে এসেও তাদের পড়াশোনার প্রতি যে আগ্রহ আছে তা প্রশংসনীয়।