27 C
Dhaka
Sunday, November 24, 2024

স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া হলেও টাকা নিতেন ছাত্রলীগ নেতা!

শুধু বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) সাধারণ শিক্ষার্থীরাই নয়, কর্ণকাঠিবাসীও জিম্মি ছিলেন ক্যাম্পাসের পরিচয়ধারী ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে। চাঁদাবাজি, বাড়িঘর ভাঙচুর, জমি দখল, অবৈধ বালুর ব্যবসা, বাকী খাওয়া, বাসা থেকে তুলে এনে আটকে রেখে নির্যাতন ও গভীর রাতে ঘরে ঢুকে শারিরীক নির্যাতনসহ নানা অভিযোগের ফিরিস্তি পাওয়া গেছে এসব ছাত্রলীগ পরিচয়ধারী নেতাদের বিরুদ্ধে।

এমনকি এলাকায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ার মীমাংসা কিংবা এলাকায় নতুন গাছ লাগালেও চাঁদা দেওয়া লাগত ছাত্রলীগ নেতা রাজীব মন্ডলকে।

মঙ্গলব৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টার দিকে কাঁচাবাজার পুলিশ বক্সের কাছ থেকে স্থানীয়রা রাজীব মন্ডলকে আটক করে। এ সময় স্থানীয় লোকজন চড়াও হলে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা তাকে ঘরোয়া হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে আটকে রাখে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের উপস্থিত হতে দেখা যায়। অভিযোগ নিয়ে হাজির হয় স্থানীয়রাও। তবে এ কাজের সাথে শুধু রাজিব মন্ডল একা জড়িত নয়।

স্থানীয়রা বলছেন, মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাত, আল সামাদ শান্ত, আবুল খায়ের আরাফাত ওরফে একে আরাফাত এসব কর্মকাণ্ডের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল।

জানা যায়, স্থানীয় ছাত্রদল নেতা রিয়াজ হাওলাদার, রাহাত, সোহাগ সিকদার রাজিব মন্ডলকে আশ্রয় দেওয়ার কথা বলে নিয়ে আসে। পরে তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগকর্মী নাহিদ রাফিনের বাসায় ওঠেন। দুপুরে রিয়াজ হাওলাদারের সাথে দেখা করতে আসলে ঘিরে ধরে বিক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। পরে একে একে হাজির হয় পাওনাদাররা।

এ বিষয়ে স্থানীয় ছাত্রদল নেতা রিয়াজ হাওলাদার বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। বিকেল ৩টা পর্যন্ত মোট ৩৫ জন পাওনাদার উপস্থিত হয়ে তাদের পাওনা টাকার কথা জানান। এতে হিসাব করে রাজিব মন্ডলের কাছে পাওনা দাঁড়ায় ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

এ সময় উপস্থিত কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তার (রাজিব মন্ডল) কাছে সবাই টাকা পায়। একজন মুচি পর্যন্ত তার কাছে টাকা পায়। খেয়ে হেঁটে চলে যেত। টাকা চাইলে মারধর করত। এমনকি তাকে দেখলে সিগারেটের প্যাকেট সরিয়ে রাখতেন দোকানিরা।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা লুৎফর রহমান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বাড়িতে বালু ফালানোর জন্য জাহাজ নিয়েছি। পাইপ বিছানো হইছে। এমন সময় রাজিব মন্ডল গিয়ে আমাকে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের খরচ দেন। নইলে বালু ফেলতে পারবেন না। পরে আমাকে আমার জমিতে বালু ফেলতে দেয় নাই।’

সিদ্দিকুর রহমান নামে আরেক স্থানীয় বাসিন্দা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার প্রতিবন্ধী এক আত্মীয় টিকলী শরীফ নামে এক ছাত্রলীগ নেত্রীকে নাকি ডিস্টার্ব করেছে। সে জন্য তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নিয়ে পৈশাচিকভাবে মারধর করে। ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। পরে রাত ৪টার দিকে আমার কাছে ফোন দিয়ে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। আমি ওই টাকা দিয়ে তাকে উদ্ধার করি। অপরাধ করলে শাস্তি হোক কিন্তু তিনি টাকা কেন চাবে।’

স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার ভাই ছাত্রদল করে এজন্য আমাকে বাড়ি থেকে ভার্সিটিতে ধরে এনে ঘাড়ে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়েছে। আমাকে অনেক মারছে। এই রাজিব মন্ডল, সিফাত শান্ত, আরাফাত আমারে চার ঘণ্টা আটকে রেখেছে। লাঠি দিয়া পিটিয়েছে। আমি পা ধরে মাফ চাইলেও তারা কথা শুনেনি। পরে আমার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকার স্বীকারোক্তি নিয়েছে। পরের দিন আমাকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া লাগছে। রাজিব মন্ডল টাকা পেয়ে নাচা শুরু করছে, বলে যা যা তুই যা। টাকা গোনা লাগবে না।’

ঘটনাস্থলে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা জানান, রাজিব মন্ডল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বিক্রি করে খেয়েছে। এর সাথে আরও যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করেছে তাদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম এতদিন যারা নষ্ট করেছে তাদের অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের আইনের আওতায় আনা উচিত।

তবে রাজিব মন্ডল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এখানে বেশি করে লিখে রেখেছে। আমার কাছে এত টাকা পাবে না। যদি কেউ প্রমাণ দেখাতে পারে তাহলে আমি তাকে এর দ্বিগুণ দিব।’ তিনি আরও বলেন, ‘বরং আমি মানুষের কাছে টাকা পাব। সেগুলো উঠাতে এসেছি। এখানে আমাকে রাজনৈতিকভাবে ফাঁসানো হচ্ছে।’

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ছাত্রলীগের কোনো কমিটি ছিল না। তবে মহিউদ্দীন আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিয়েছেন। আরেকটি পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন আলীম সালেহী ও অন্যরা। তারা উভয়ই সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিল।

অন্যদিকে বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের অনুসারী ছিলেন অমিত হাসান ওরফে রক্তিম ও ময়িদুর রহমান ওরফে বাকি। তবে হলে মহিউদ্দীন আহমেদের ওপর হামলার পর থেকে তিনি ক্যাম্পাস ছাড়লে এসবের নেতৃত্ব দেন আল সামাদ শান্ত ও অন্যরা।

এরা সাবেক মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের অনুসারী ছিলেন। তবে রাজিব মন্ডল যে যখন আধিপত্য বিস্তারের নেতৃত্ব দিত তখন তার অনুসারী ছিল। যদিও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বর্তমানে এসব নেতারা ক্যাম্পাস থেকে লাপাত্তা রয়েছেন।

সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ