জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান ‘ব্যর্থ হয়ে গেছে’ বলে মত দিয়েছেন কবি ও রাষ্ট্র চিন্তক ফরহাদ মজহার। তিনি বলেছেন, সৈনিকরা গুলি করতে অস্বীকার করেছিল বলে এই গণঅভ্যুত্থান সফল হয়েছে।
সেনা প্রধানের সাপোর্টের কারণে এই সরকার এখনও টিকে আছে। সেনাপ্রধান যদি এই সরকারকে সমর্থন না করেন, তাহলে সরকার মুহূর্তের ভেতরেই পড়ে যাবে। তার শুভবুদ্ধির ওপর ভিত্তি করে এটা দাঁড়িয়ে আছে।
শুক্রবার (১ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সেন্টার ফর ডেমিক্র্যাসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজ আয়োজিত ‘দুর্নীতি ও রাষ্ট্রপতি বা সংস্কার’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।
তবে ‘সেনা সমর্থিত উপদেষ্টা সরকার’ চান না জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, আমাদের সৈনিকরাও চায় না।
ফরহাদ মজহার বলেন, গণতন্ত্রে শাসিত এবং শাসক বলে কোনো পার্থক্য থাকতে পারে না। গণতন্ত্রে জনগণ নিজের শাসক। আইন এবং রাজনীতির সম্পর্ক আমরা বুঝি না বলে এবার গণঅভ্যুত্থানটা ব্যর্থ হয়েছে।
৮ অগাস্ট অন্তর্বর্তী সরকার বঙ্গভবনে শপথ নিয়ে ভুল করেছে বলেও মনে করেন তিনি। ফরহাদ মজহার বলেন, আমরা সবাই মিলে একটা গণঅভ্যুত্থান করেছি। গণঅভ্যুত্থানে কোথাও শপথ করার প্রয়োজন হয় না।
তিনি বলেন, যারা গুলির মুখে প্রাণ দিয়েছেন, যারা পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন তাদের প্রতি যথার্থ মর্যাদা আপনি (মুহাম্মদ ইউনূস) দিতে পারতেন যদি শহীদ মিনারে বা রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে বলতেন, ‘আমি ক্ষমতায় এসেছি, যেহেতু তুমি প্রাণ দিয়েছ, আমি ক্ষমতায় এসেছি তোমার রক্তের ওপর, আমি তোমার রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করব না।’
তিনি আরও বলেন, কিন্তু তা না করে যখনই আপনি বঙ্গভবনে ঢুকেছেন আপনি কিন্তু সেই শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেছেন। তার কুফল এখন আপনারা দেখতে পাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও দেখবেন।
ফরহাদ মজহার বলেন, ব্যর্থ হওয়াটা জরুরি ছিল, যাতে আমরা টের পাই আমাদের অজ্ঞতা, আমাদের বেহুঁশ অবস্থা। এটা আমাদের ভুল দিকে নিয়ে যাবে। আমরা বারবার সংস্কার সংস্কার বলছি। আপনি তো বাড়িই গঠন করেন নাই, সংস্কার কীভাবে করবেন?
তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্রের কথা বলি জনগণকে উপেক্ষা করে। আমরা গণঅভ্যুত্থানের পরেও জনগণকে উপেক্ষা করি, এটা অদ্ভুত ব্যাপার। এত মানুষ শহীদ হয়ে গেল, এত মানুষ পঙ্গু হয়ে পড়ে আছে, তারপরও কিন্তু আমরা জনগণকে উপেক্ষা করেছি। এটা ঠিক নয়।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণের বিরোধিতা করায় বিএনপিরও সমালোচনা করেন ফরহাদ মজহার।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে আমরা যে দুর্বল মুহূর্তে পড়ে গেছি, এই সময় বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল, তাদের কাছে অনেক বেশি দায়িত্ব আমরা আশা করি। বিএনপি কেন চুপ্পুকে (সাহাবুদ্দিন) রাখতে চায় আমি কোনো যুক্তি খুঁজে পাই না। এটার কোনো সাংবিধানিক যুক্তি এবং রাজনৈতিক যুক্তি নেই।
আলোচনায় জাতীয় নির্বাচনের আগে একটি জাতীয় পরিষদ নির্বাচন করে কিছু সংস্কার কাজ এগিয়ে নেয়ার পরামর্শও দেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে একটা নতুন খসড়া তৈরি করতে হবে, সেই খসড়ার আলাপ আলোচনা করার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।