শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেলে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে ভারতের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছেন। তার এই পদত্যাগের খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে ভারতের প্রসিদ্ধ বাংলা পত্রিকা আনন্দবাজার পত্রিকা তাদের অনলাইন ভার্সনে।
সেখানে লেখা হয়েছে :
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ-আন্দোলন দমন করতে লাঠি-গুলি-হুঙ্কার— প্রায় সব অস্ত্রই ব্যবহার করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না। গণবিক্ষোভের জেরে শুধু প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগই নয়, বাংলাদেশও ছাড়তে হলো শেখ হাসিনাকে।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিজের বাসভবনে খুন করা হয়েছিল সপরিবার শেখ মুজিবর রহমানকে। আর কাকতালীয়ভাবে প্রায় ৫০ বছর পরের এক আগস্টে দেশ ছাড়তে হলো মুজিবকন্যা শেখ হাসিনাকে।
বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করার কিছু দিন আগে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রমনায় রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে ঐতিহাসিক ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, “আমাদের আর দাবায়ে রাখতে পারবা না।”
বাংলাদেশ রাজনীতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ‘দাবায়ে’ রাখার চেষ্টা করেছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু শেষমেশ নতুন করে ছাত্রবিক্ষোভ এবং সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার মাত্র তিন দিনের মাথায় প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে হলো তাকে।
আরো পড়ুন আন্দোলন না করে বিএনপিকে হিন্দি সিরিয়াল দেখার পরামর্শ ওবায়দুল কাদেরের
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গত কয়েক দিন ধরেই উত্তপ্ত ছিল বাংলাদেশ।
প্রবল জনরোষের মুখে পড়ে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট কোটা সংস্কারের পক্ষে রায় দিলেও নয় দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। আটক আন্দোলনকারীদের মুক্তি, সমস্ত মামলা প্রত্যাহার, কোটা আন্দোলনে হামলাকারীদের শাস্তিসহ আরো বিভিন্ন দাবি ছিল আন্দোলনকারী ছাত্রদের। কিন্তু বিগত কয়েক সপ্তাহে পুলিশ প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগের যৌথ হামলায় একের পর এক আন্দোলনকারী মারা গেছেন বলে অভিযোগ ওঠে।
নয় দফা দাবির পরিবর্তে একটিমাত্র দাবি নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, তা হলো হাসিনা সরকারের পদত্যাগ। অন্যথায় সর্বাত্মক অসহযোগের ডাক দেয় তারা।
‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন অনুসারে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘অসহযোগ কর্মসূচি’ ঘিরে যে সংঘাতের সূত্রপাত হয়, তাতে কেবল রোববারেই অন্তত ৯৮ জনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ১৪ জন পুলিশকর্মীও। হামলা, পাল্টা হামলায় জখম হন শতাধিক মানুষ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শাসকদল আওয়ামী লীগের কর্মী এবং পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়ান আন্দোলনকারীরা।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রথম পর্বে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ বলে কটাক্ষ করেন শেখ হাসিনা। যদিও পরে সেই অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। তবে আন্দোলনের নেপথ্যে বিএনপি, কট্টরপন্থী সংগঠন জামায়াতের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন হাসিনা।
ছাত্রদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভে পুলিশের যথেচ্ছ গুলি-বন্দুক ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের থামাতে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা।
গত জানুয়ারি মাসে পঞ্চম বারের জন্য ক্ষমতার মসনদে বসেছিলেন শেখ হাসিনা। ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিল প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও বাম দলগুলো। তাদের দাবি ছিল ‘স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থাপনায় সাধারণ নির্বাচন। কার্যত বিরোধী দলহীন বাংলাদেশে হাসিনার কর্তৃত্ব ছিল নিরঙ্কুশ।
কিন্তু নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পাওয়ার সাত মাস পরেই মসনদ ছাড়তে হল হাসিনাকে। গণআন্দোলনকে ‘দাবায়ে’ রাখতে পারলেন না হাসিনা। বাংলাদেশের রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট অল্পের জন্য গ্রেনেড হামলা থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন হাসিনা। আর এক আগস্টে অবশ্য শেষ রক্ষা হলো না।