সরকারি কর্মচারীদের গ্রেড অনুযায়ী দুই ভাগে ভাগ করে মহার্ঘ ভাতা দেবে সরকার। সাড়ে ১৪ লাখ সরকারি চাকরিজীবীকে মূল বেতনের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, মহার্ঘ ভাতা বাস্তবায়ন নিয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা গত বুধবার সভা করেছেন। সভায় সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন হারে মহার্ঘ ভাতা ধরে এ খাতে বছরে কত টাকা বাড়তি খরচ হবে, তার হিসাব করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা দেয়ার বিষয়ে সুপারিশ দিতে গত ১২ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের কমিটি করেছিল অর্থ বিভাগ।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার মহার্ঘ ভাতা পর্যালোচনা কমিটির সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান সচিব বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, মহার্ঘ ভাতা নিয়ে দুটি সভা হয়েছে। এবার পেনশনারদেরও মহার্ঘ ভাতা দেয়া হবে। যারা মহার্ঘ ভাতা পাবেন, ইনক্রিমেন্টের সময় সেই ভাতা বেসিকের সঙ্গে যোগ হবে। অবশ্যই ৩০ জুনের মধ্যে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বেসামরিক প্রশাসনের সরকারি চাকরিতে এখন ১৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৮ জন কর্মরত। এর মধ্যে ১ম থেকে ১০ম গ্রেডে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৭৪৪ এবং ১১তম থেকে ২০তম গ্রেডে ১১ লাখ ২ হাজার ৭৭৪ জন।
সরকারি কর্মচারীদের মূল বেতনের ঠিক কত শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা দেয়া হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে কমিটি সূত্র জানায়, ১১তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আর ১ম থেকে ১০ম গ্রেডের কর্মচারীদের ১০ বা ১৫ শতাংশ হারে ভাতা দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।
প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীকে ১০-২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা দিতে বছরে বাড়তি প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা লাগবে বলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এ ভাতা কার্যকর ধরা হতে পারে।
মহার্ঘ ভাতা পর্যালোচনা কমিটির সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, আগামী বাজেটের আগেই মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করা হবে। বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের সময় মহার্ঘ ভাতা মূল বেতনের সঙ্গে যোগ হবে। এবার পেনশনভোগীরাও এ ভাতা পাবেন।
১ম থেকে ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তারা ২০ শতাংশ এবং ১১তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীরা ৩০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতার দাবি জানিয়েছেন। তবে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, মহার্ঘ ভাতা সর্বোচ্চ ২০ শতাংশের বেশি দেয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। এবারের মহার্ঘ ভাতা মূল বেতনের সঙ্গে যোগ হওয়ায় আনুপাতিক হারে সবার বাড়িভাড়ার অর্থ বেড়ে যাবে। ফলে মহার্ঘ ভাতার বাইরেও সরকারের খরচ বাড়বে।
এর আগে কখনোই মহার্ঘ ভাতা মূল বেতনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নির্দিষ্ট না থাকায় তারা পে কমিশনের দিকে না গিয়ে মূল বেতনের সঙ্গে মহার্ঘ ভাতা অন্তর্ভুক্ত করছে বলে মনে করছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া। তিনি বলেন, ‘মূল বেতনের সঙ্গে মহার্ঘ ভাতা যোগ হলে কর্মচারীরা তার সুবিধা পাবেন। এটা সবার জন্যই ভালো হবে। যখন রাজনৈতিক সরকার আসবে, তখন তাঁরা মহার্ঘ ভাতা তুলে দিয়ে নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করতে পে কমিশন গঠন করতে পারবেন।’
সরকারি কর্মচারীরা এখন অষ্টম বেতন কাঠামো অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুলাই এই বেতন কাঠামো কার্যকর হয়। তার আগে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুলাই সপ্তম বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছিল।
অষ্টম বেতন কাঠামো নিয়ে সুপারিশ দিতে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে ‘পে অ্যান্ড সার্ভিসেস কমিশন’ গঠনের আগে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করেছিল সরকার। ওই হারে মাসে সর্বনিম্ন দেড় হাজার থেকে সর্বোচ্চ ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত মহার্ঘ ভাতা দেয়া হয়।
সরকার সাধারণত পাঁচ বছর পরপর নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করে। কিন্তু অষ্টম বেতন কাঠামো ঘোষণার নয় বছরের বেশি সময় পরও নতুন বেতন কাঠামো না দেয়ায় অনেকের বেতন গ্রেডের শেষ ধাপে ঠেকেছে। বিষয়টির পাশাপাশি মূল্যস্ফীতিকে আমলে নিয়ে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুলাই থেকে সরকারি কর্মচারীদের ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। মহার্ঘ ভাতা ঘোষণার পর এ প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে কি না, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
সূত্র: দৈনিক শিক্ষা