সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সহ-উপাচার্য ড. মো. সাজেদুল করিম ও কোষাধ্যক্ষ ড. মো. ইসমাইল হোসেনকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের পক্ষ থেকে ‘শপথবাক্য পাঠ করানো’র বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়টির সহ-উপাচার্য হিসেবে মো. সাজেদুল করিম ও কোষাধ্যক্ষ হিসেবে অধ্যাপক মো. ইসমাইল হোসেন কর্মক্ষেত্রে যোগদান করেন।
ওই দিন বিকেল চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলনকক্ষে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক দল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি এবং কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
একপর্যায়ে নতুন সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে শপথবাক্য পাঠ করানো হয়। শপথবাক্য পাঠ করানোর ভিডিওটি সন্ধ্যার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, এটি আনুষ্ঠানিক কোনো শপথ অনুষ্ঠান ছিল না। নতুন প্রশাসনের সাথে শিক্ষার্থীদের মতবিনিময় ছিল। মতবিনিময়ে শহিদদের আত্মত্যাগ এবং জুলাইয়ের স্পিরিটকে ধরে রাখতে স্যারদের কাছে কয়েকটি দাবিতে শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার বিষয় উঠে আসে। যে ভিডিওটা সামনে এসেছে এটি জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট ধারণ করার জন্য শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিশ্রুতি ও প্রতিজ্ঞা ছিল।
এতে আরও বলা হয়, আমাদের বাক্যগুলো ছিল– জুলাই বিপ্লবে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা, আহতদের সুস্থতা কামনা। এবং জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট ও আদর্শ ধারণ করে ক্যাম্পাসকে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি মুক্ত রেখে শিক্ষার্থীবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি।
এবং দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শাবিপ্রবি যেন দেশ ও জাতি, এবং বিশ্বাবাসীকে আলোর পথ দেখাতে সক্ষম হয় সেই লক্ষ্যে কাজ করার প্রতিজ্ঞা। আমাদের এই উদ্দেশ্যকে আমরা আরও সুন্দর এবং যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে না পারার কারণে মূলত এই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছ। এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরির জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।
এদিকে, এ ঘটনায় আজ শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ শাখার একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নবনিযুক্ত সহ–উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ যোগদান করার পর বেলা তিনটায় শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরে আনুমানিক চারটায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেখা করার জন্য এলে উনারা তাদের সঙ্গে কথা বলেন। শিক্ষার্থীদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ পরিবেশটি হয়ে পড়ে শোকাবহ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অন্যদিকে দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় হতাশা, দেশের চলমান প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তাদের উচ্চাশা এবং নতুন প্রশাসন আসায় অতিমাত্রায় আবেগে আপ্লুত হয়ে জুলাই বিপ্লবের চেতনা ধারণ করে শাবিপ্রবি তথা দেশের জন্য কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ বাক্যগুলো সবার মুখে উচ্চারিত হয়েছে। এটি কোনো শপথ অনুষ্ঠান ছিল না। ঘটনাটি যেভাবে আলোচিত ও সমালোচিত হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে এমনটি হয়নি।
এছাড়া গতকালের মতবিনিময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি স্যারদের কাছে ওই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছে এবং একই বিষয়ে ইতিমধ্যে তারা দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করে বিবৃতি প্রদান করেছে বলে জনসংযোগ শাখার বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।