22 C
Dhaka
Tuesday, November 26, 2024

যেমন হতে পারে পুলিশের নতুন পোশাক ও লোগো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও হাসিনা সরকারের পতনের পর টালমাটাল অবস্থা দেশের পুলিশ বাহিনীর। একাধিক দাবিতে ৫ আগস্টের পর থেকেই কর্মবিরতি পালন করছিল তারা। সুযোগ নিয়ে চুরি, ডাকাতি, লুটসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় এক শ্রেণির মানুষ।

গত ১২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইজিপিসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি পেয়ে কর্মবিরতিসহ সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কাজে ফেরেন পুলিশ সদস্যরা। বর্তমান ইউনিফর্ম ও লোগো পরিবর্তন নিয়ে ওঠে দাবি। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন ঘোষণা দেন পুলিশের ইউনিফর্ম ও লোগো পরিবর্তন হবে।

এরই মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের ইউনিফর্ম ও লোগো পরিবর্তনের বিষয়ে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে পুলিশ সদরদফতর। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ বিভাগের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা কামরুল আহসান।

তিনি বলেন, ইউনিফর্ম ও লোগো পরিবর্তনে উদ্যোগের অংশ হিসেবে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। সোমবার এই কমিটি গঠন করা হয়।

এ কমিটি ইউনিফর্ম তৈরির কাপড়ের মান, ইউনিফর্মের ডিজাইন তথা যে কোনো টেকনিক্যাল বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সদস্যদের কমিটিতে কো-অপ্ট (অন্তর্ভুক্ত) করতে পারবেন বলেও নির্দেশনায় জানানো হয়েছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের নতুন পোশাকে সবুজ রঙের প্রাধান্য পেতে পারে। লোগোতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। লোগোতে একটি অংশে নৌকা ছিলো। সেখানে বাংলাদেশের ম্যাপ যুক্ত হচ্ছে।

কমিটিতে যারা আছেন-

পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (লজিস্টিকস) মোহাম্মদ আতাউল কিবরিয়াকে সভাপতি করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- অতিরিক্ত ডিআইজি (ডেভেলপমেন্ট রেভিনিউ) ড. শোয়েব রিয়াজ আলম, অতিরিক্ত ডিআইজি (ওঅ্যান্ডএম) ফারুক আহমেদ, অতিরিক্ত ডিআইজি (এপিবিএন) মোহাম্মদ শিহাব কায়সার, পুলিশ সুপার (এপিবিএন) আবদুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লজিস্টিক) মো. নুরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নৌ পুলিশ) জুয়েল রানা, পুলিশ পরিদর্শক (সিআইডি) মো. জাহিদুল ইসলাম, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সান্টুর রহমান ও কনস্টেবল বরকত উল্লাহ।

ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দিন থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা-আক্রমণ ও হত্যার শিকার হন পুলিশ সদস্যরা। এরপর থেকে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ভয় ও আতঙ্কে কাজে ফিরছিল না তারা। পরে কেউ কেউ থানায় ফিরলেও তারা সাদা পোশাকে ছিলেন। বিভিন্ন বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ১১ দফা দাবি দেন পুলিশ সদস্যরা।

ব্রিটিশ আমলে পুলিশের পোশাক—

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ব্রিটিশ আমল থেকে পুলিশের পোশাক ছিল খাকি রঙের।

সাধারণত যে কোনো সেবাসংস্থার পোশাকগুলো দুভাবে নির্ধারণ করা হয়। দেশ-কালের ওপর ভিত্তি করে সেবাসংস্থাগুলোর পোশাক নির্ধারণ করা হয় বেশিরভাগ সময়েই। যেমন শীতপ্রধান দেশগুলোর পুলিশের পোশাকের রঙ হয় কালো রঙের। সেখানে তাপমাত্রা ধরে রাখার একটা বিষয় পোশাকে যুক্ত থাকে।

গরম বা নাতিশীতষ্ণদেশগুলোতে পুলিশের পোশাক সাদা, খয়েরি বা হালকা রঙের দেখা যায়, যা কিনা তাপ শোষণ কম করে। ভারত বা এই অঞ্চলে বিভিন্ন সেবাসংস্থার পোশাক খাকি হওয়ার আরেকটি কারণ ছিলো ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ইতিহাস।

ব্রিটিশ পুলিশ হাফ প্যান্ট এবং সাদা রঙ নির্বাচন করেছিলেন। কারণ এই রঙটি সূর্যের তাপকে প্রতিফলিত করে গরমের থেকে রক্ষা করে। বিশেষ করে উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে তারা হাফ প্যান্ট পরতো।

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনেক আগেই তা বদলে গেছে। বাংলাদেশে দু’বার পুলিশের কয়েকটি ইউনিটের পোশাকের রঙে পরিবর্তন আনা হয়। মহানগর ও জেলা পর্যায়ে দুই রঙের পোশাক দেওয়া হয়। তবে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও ব্যাটালিয়নভেদে পোশাকের ভিন্নতাও রয়েছে।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রোটেকশন ব্যাটলিয়নের (এসপিবিএন) পোশাক সম্পূর্ণ ভিন্ন রঙের।

২০০৪ সালে পুলিশের পোশাক পরিবর্তন করে মহানগরগুলোয় হালকা জলপাই রঙের করা হয়। জেলা পুলিশকে দেওয়া হয় গাঢ় নীল রঙের পোশাক। র‌্যাবের কালো ও এপিবিএনের পোশাক তৈরি করা হয় খাকি, বেগুনি আর নীল রঙের মিশ্রণে। এসপিবিএনের পোশাকের জামার রং করা হয় ধূসর।

সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ