যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান স্মিথ কোজেনারেশনের ৩১ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলারের একটি সালিশি মামলায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে দেশটির আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ইউএস ডিস্ট্রিক্ট বিচারক কার্ল জে নিকোলস স্মিথ মার্কিন মার্শাল সার্ভিসকে এ আদেশ দেন।
এদিকে গ্রেপ্তার এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সরকারি বাসভবনে আশ্রয় নিয়েছেন উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
জানা গেছে, গত ২১ অক্টোবর সোমবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে আসেন অর্থ, বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
২৬ অক্টোবর শনিবার পর্যন্ত চলবে এই সভা। এছাড়াও অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র সফরকারী দলে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ সাতজন উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা।
এই ঘটনায় তৎক্ষনাৎ বাংলাদেশ মার্কিন আদালতে আপিল করে। আপিলে লিখেছে, যে দুজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তারা উভয়েই উচ্চ পর্যায়ের বাংলাদেশি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তা। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফৌজদারি এবং দেওয়ানি মামলা থেকে দায়মুক্ত।
আপিলে আরও লিখেছে, বিচারক নিকোলসের আদালতের রায় এখতিয়ার বহির্ভূত ও গ্রেপ্তারের প্রয়োগ অযোগ্য।
এদিকে মামলায় উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে বাংলাদেশের অর্থায়নের ‘দুইজন সিনিয়র নেতা’ হিসাবে উল্লেখ করেছে। এছাড়াও মামলার নিষ্পত্তির জন্য তাদের জবানবন্দি প্রয়োজন অঅছে বলে জানায়। যুক্তরাষ্ট্রের এই ব্যবসায়িক পাওয়ার কোম্পানি ২০০৬ সালে এ মামলা দায়ের করে। প্রতিষ্টানটি গত বৃহস্পতিবার বিকালে ডিসি সার্কিটে হঠাৎ করে একটি দ্রুত আপিল দায়ের করে।
অন্যদিকে নিউইয়র্ক ভিত্তিক একটি আইনি গণমাধ্যম ল৩৬০ এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ঘটনায় উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের সঙ্গেও যোগাযোগ করে করে, তিনিও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এছাড়াও গণমাধ্যমটি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ডিএম সালাউদ্দিন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (উত্তর আমেরিকা) খন্দকার মাসুদুল আলমের সঙ্গেও মোবাইলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে। তারাও কেউ এ বিষয়ে মন্তব্যে করেননি।
গণমাধ্যমটি তরফ থেকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের দুই শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা জানান, তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন।
এদিকে আদালতে হাজির না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি আদালতকে জানায়, উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য বুধবার হাজির হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা হাজির হননি।
উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও গভর্নর আহসান এইচ মনসুরআহমেদ ও মনসুর দুজনেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক বৈঠকে এই সপ্তাহে ওয়াশিংটনে গিয়েছেন। স্মিথ কোজেনারেশন পাওয়ার প্রতিষ্টানটি বলেছে, এই সফরটি হতে পারে জবানবন্দি নেওয়ার একমাত্র সুযোগ।
বিরোধের সূত্রপাত ১৯৯৭ সালে স্মিথ কোজেনারেশন বাংলাদেশের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করে। পরে বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৯ সালে এই প্রকল্পটি বাতিল করে দেয়। কোম্পানিটি সেই বছরই আইসিসি ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করে।