মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের মজিদপুরে চা দোকানি ইউনূস বেপারীর ছেলে রিফাত বেপারী। মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজে লেখাপড়ার চান্স পেয়েছেন তিনি। রিফাত ডাক্তার হয়ে মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে চান।
রিফাতের বাবা ইউনূস বেপারী বলেন, ‘আমার ছেলে যখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে তখন আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। ডাক্তার আমাকে কাজ করতে নিষেধ করে। আমি কাজ না করলে সংসার ও ছেলেদের দেখবে কে। সেখান থেকেই ছেলেকে ডাক্তার বানানোর চিন্তা ছিল। ছেলে এখন ডাক্তারি পরীক্ষায় চান্স পেয়েছে। যত কষ্টই হোক, তার জন্য টাকা-পয়সা জোগাড় করতে হবে। সে ডাক্তার হয়ে যেন মানুষের সেবা করতে পারে।’
রিফাতের মা ঝর্না বেগম জানান, রিফাত যখন ছোট তখন তার বাবার কোমড়ের একটি অপারেশন হয়। ডাক্তার তাকে কাজ করতে নিষেধ করেন। কিন্তু সংসার চালাতে তাকে কাজ করতে হয়। তখন থেকেই রিফাতের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল।
তিনি বলেন, ‘কষ্ট হলেও রিফাতের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যেতে হবে। তাছাড়া আমার ভাইয়েরা সহযোগিতা করবেন। আমরা চাই, ও ডাক্তার হয়ে যেন অসহায় মানুষের সেবা করতে পারে।’
রিফাত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মায়ের স্বপ্ন পূরণ, বাবার অক্লান্ত পরিশ্রম আর ইচ্ছা শক্তির ফলে মেডিক্যাল পরীক্ষায় ৩২৩তম স্থানে উত্তীর্ণ হয়ে সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। পরিবারে স্বচ্ছলতা ছিল না, তাই উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান, কিংবা উচ্চতর গণিতে প্রাইভেট পড়াও সম্ভব হয়নি। ’
রিফাতের সাফাল্যে আনন্দিত এলাকাবাসী, স্বজন, সহপাঠী ও স্কুলের শিক্ষক। শুলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. ইসহাক মোল্লা বলেন, ‘আমাদের স্কুল থেকে ডাক্তার আরও কয়েকজন হয়েছেন। বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় মেডিক্যাল স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ। সেখানে রিফাত চান্স পেয়েছে। এটা অনেক কিছু।’
তিনি বলেন, ‘রিফাতের একটা স্বভাব ছিল, সে শিক্ষকদের থেকে পড়া আদায় করে নিতো। বর্তমান যুগে পড়াশোনার চাপ অনেক কমে গেছে, অনেকের মধ্যে পড়াশোনায় অনীহা দেখা যায়। কিন্তু রিফাতের মধ্যে সেটা দেখিনি। সবসময় শিক্ষকদের থেকে কীভাবে পড়া আদায় করে নিতে হয় তার মধ্যে সেটা ছিল।’
একই এলাকার ডাক্তার সিজান শেখ বলেন, ‘মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় রিফাত ৩২৩তম হয়েছে। এটি আমাদের গ্রামের জন্য খুবই বড় একটি অর্জন।’
শুধু এলাকাবাসীই না, রিফাতের সাফল্যে খুশি সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা আক্তারও। ভর্তি হওয়া, বই কেনার জন্য অনুদানসহ রিফাতকে সার্বিক সহায়তা দেওয়ার কথা জানান তিনি।
শাহিনা আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রথমে আমি এই পরিবারটিকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আর যে ছেলেটি মেডিক্যালে চান্স পেয়েছে তাকে আমাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ। তার ভবিষ্যৎ জীবনের সাফল্য কামনা করছি। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার পাশে আছি।’