অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তাকে যৌক্তিক, সময়োপযোগী ও জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন বলে মনে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।
শিক্ষা খাতের সংকট সমাধানের লক্ষ্যে ইউট্যাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রস্তাবনাও দিয়েছে সংগঠনটি।
রবিবার (২৫ আগস্ট) ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান এক বিবৃতিতে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন উপযোগী নয়
এবং তা পরিমার্জন করা জরুরি বলে তার অবস্থান সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন যোগ্যতা বিশেষ করে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং তা কার্যকরী হবে না বলে মনে করেন। তিনি যথাসম্ভব আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে গিয়ে পর্যায়ক্রমে তা পরিমার্জন করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা নির্বিঘ্ন রাখার ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করেছেন।
তারা আরও বলেন, বর্তমানে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ২০২৫ সালে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর আগের শিক্ষাক্রম অনুসারে অধ্যয়ন করতে শিখন ঘাটতিজনিত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।
এই ঝুঁকি নিরসণের লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ এর আলোকে ২০২৪ সালের অবশিষ্ট চার (৪) মাসের জন্য ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির প্রতিটি বিষয়ে একটি ব্রিজিং কোর্স প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এই ব্রিজিং কোর্সের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পরবর্তী শ্রেণির প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ট শিখন যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ তৈরি হবে। উল্লেখ থাকে যে, এই তিন শ্রেণির জন্য নতুন শিক্ষা ক্রমের সামগ্রিক প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে।
ইউট্যাব মনে করে, প্রাথমিক স্তরের জন্য পরিমার্জিত নতুন শিক্ষাক্রমের সঙ্গে জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ এর অনেকটাই ধারাবাহিকতা রয়েছে। ফলে শুধু আগের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া ফিরিয়ে এনে বর্তমান শিক্ষাক্রম অব্যাহত রাখা যেতে পারে।
২০২৫ সালের জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ অনুসারে প্রণীত পাঠ্যপুস্তক ছাপানো ও বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। অতিসত্বর নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন কমিটি গঠনের মাধ্যমে ২০২৬ সাল থেকে বাস্তবায়নযোগ্য শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত হলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসবে।
তারা বলেন, ইউট্যাব শিক্ষা উপদেষ্টার এই মনোভাবের সঙ্গে একমত পোষণ করছে এবং উপদেষ্টার এ বক্তব্যে বাংলাদেশের আপামর মানুষের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। এখানে বলা আবশ্যক যে, ইউট্যাব দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও লেখালেখির মাধ্যমে নতুন শিক্ষাক্রমকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনুপোযোগী বলে দাবি করে আসছে। এমনকি শিক্ষা খাতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দুঃশাসন, অব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন অন্যায়, দুর্নীতি ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে ইউট্যাব।
নেতৃদ্বয় বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। এ ক্ষেত্রে বর্তমান শিক্ষাবর্ষের শেষ ৪ মাস এবং ২০২৫ শিক্ষা বর্ষের জন্য দুটি ভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। বর্তমানে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য ২০২৬ সালে এসএসসি পরীক্ষা জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ অনুসারে গ্রহণ করা সমীচীন।
এজন্য অনতিবিলম্বে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভাগ করা এবং জরুরি ভিত্তিতে তাদের জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ অনুসারে প্রণীত বই ছাপানো ও বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। বই বিতরণের পূর্ব পর্যন্ত বইগুলোর অনলাইন ভার্সন এনসিটিবির ওয়েবসাইটে আপলোড করে রাখা। এই কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্নের স্বার্থে বর্তমানে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য পরবর্তী ১৮ মাসের একটি একাডেমিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা।