স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ভারতীয় গণমাধ্যম প্রতিদিন আমাদের সম্পর্কে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে বরিশাল জেলা পুলিশ লাইন্সের ড্রিল শেডে বরিশাল বিভাগের আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অপপ্রচারের ব্যাপারে আপনারা সবসময় সজাগ থাকবেন। তারা প্রতিদিন মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। তারা যাতে মিথ্যে রিপোর্ট না দেয় সেজন্য আমি আপনাদের সহযোগিতা চাচ্ছি। আপনারা সত্য রিপোর্ট দেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, আমরা যদি কোনো ভুল করি, আপনারা বলেন, আমরা সেটা রেক্টিফাই করব। আমার ভেতরে কোনো রকম দুর্নীতি থাকলে আপনারা বলুন, আমার উত্তর দিতে দ্বিধা নেই। কিন্তু কোনো মিথ্যা রিপোর্ট আপনারা দেবেন না।
এ সময় তিনি বলেন, আমাদের বাহিনীগুলোকে জনবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে। এতে আমাদের চেষ্টাগুলো নিয়ে এখানে আলোচনা হয়েছে। আমাদের বাহিনীরও অনেক সমস্যা রয়েছে। যেমন, গাড়ি ও অর্থসহ নানা লজিস্টিক সমস্যা।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও কীভাবে উন্নতি করা যায় এ ব্যাপারেও আলোচনা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বরগুনার এসপির বিষয়ে তদন্ত করে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানিয়ে মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দুএকদিন দেরি হচ্ছে হয়তো। তবে একটি ফরমাল ইনভেস্টিগেশন তো করতেই হবে। আর তাতে যদি তাকে দোষী পাওয়া যায় অবশ্যই তার বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে অন্যায় করলে দরকার হলে এদেরও জেলে নেওয়া হবে।
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, এবারে অবশ্যই একটা সুরাহা হবে। এখানে ৬ মাসের সময় দেওয়া হয়েছে। আর আইজিপি সাহেবের নির্দেশে নতুন একটি টিমও করে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ বাহিনীর আস্থার একটি সংকট ছিল, তবে এটা হঠাৎ করে ঠিক হয়ে যাবে না। কিন্তু আগের থেকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে, আস্তে আস্তে আরও হবে।
নীরব চাঁদাবাজির কোনো বিষয় থাকলে এসপি, পুলিশ কমিশনার ও ডিআইজি সাহেবকে জানান। তারা ব্যবস্থা না নিলে আমাকে কিংবা আইজি সাহেবকে জানান। তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।
মাদকের বিষয়ে তিনি বলেন, মাদক আমাদের বড় সমস্যা। ক্যারিয়ারগুলো ধরা পড়ছে বেশিরভাগ সময়, হোতাগুলো ধরা পড়ছে না। কিন্তু এবার বেশ কয়েকজন বড় বড় হোতা ধরা পড়েছে।
মাদক আমাদের দেশের বড় সমস্যা। এর সমাধান আমাদের সবাইকে মিলে করতে হবে। আপনাদের কাছে অনুরোধে মাদকের বিষয়ে তথ্য দেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অ্যাকশনে না গেলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা অবশ্যই যাব। পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীকেও তথ্য দিতে পারেন। পেপারে আগে না দিয়ে এদের কাছে জানান, যদি তারা না ব্যবস্থা নেয় তাহলে পেপারে দিয়ে দেন। কিন্তু মাদকের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে আমাদের সহযোগিতা করুন, মিডিয়ায় আগে দিলে তারা সজাগ হয়ে যায়, তাই আমরা চাই তারা ঘুমিয়ে থাকা অবস্থাতেই ধরে ফেলতে।
এখন অনেক মামলা হচ্ছে, অনেক নির্দোষ লোককে আসামি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনাদের সজাগ হতে হবে। আমি বাহিনী প্রধানদেরও বলেছি, যারা এ ধরনের মামলা করবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে এখন থেকে। খারাপ লোককে খারাপ বললে সেও মামলা করে দিচ্ছে, এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সার্কুলারও দিয়েছে- যারা এরকম মামলা করে সেগুলো না নেওয়ার জন্য। আর নিলেও বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আগে পুলিশ বাদী হয়ে অনেক আসামি করত কিন্তু এখন পুলিশ সেরকম মামলা দেয় না, এখন দেয় সাধারণ মানুষ।
পুলিশ সংস্কারে পুলিশ কমিশন কাজ করে যাচ্ছে, তারা রিপোর্ট দিলে সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করতে পারব।
তিনি আরও বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই আমার বরিশালে প্রথম পরিদর্শন। এখানে এসে নিজেকে খুব ধন্য মনে করছি, অন্যান্য জায়গার থেকে এখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো। মাঝে মাঝে যদিও রাস্তাটা ব্লক করে ফেলে, এটার জন্য সবাই চেষ্টা করবেন। রাস্তা ব্লক না করে তাদের যে দাবি-দাওয়া থাকে তা সঠিক চ্যানেলে প্লেস করলে সব থেকে ভালো হয়। এখানে ছাত্র প্রতিনিধিরা রয়েছে, তাদেরও আমি সহায়তা করার জন্য বলেছি, রাস্তা ব্লক করে যাতে জনগণকে ভোগান্তির মধ্যে না ফেলা হয়।
বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম, র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. রায়হান কাওছার, বরিশাল সেনানিবাসের ৭ পদাতিক ডিভিশনের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিরুল আজিম- পিএসসি উপস্থিত ছিলেন।