কানাডার রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি) এক ‘বিস্ময়কর অবস্থার’ উল্লেখ করে জানিয়েছে, ভারত সরকারের এজেন্টদের বিরুদ্ধে কানাডায় ‘গুরুতর অপরাধমূলক কার্যকলাপ’ চালানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। খবর টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
জনসাধারণকে এই তদন্তের ফলাফল সম্পর্কে জানাতে বাধ্য হয়েছে বলেও জানায় তারা। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তে একাধিক হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রে ভারতীয় সরকারে ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোমবার, কানাডা এবং ভারত পরস্পরের ছয়জন কূটনীতিককে বহিষ্কারের পর আরসিএমপি এই বিবৃতি প্রদান করে। উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কের এই অবনতির মূলে রয়েছে জুন ২০২৩-এ কানাডায় খালিস্তানপন্থী নেতা হারদীপ সিং নিজ্জার-এর হত্যাকাণ্ড। কানাডা অভিযোগ করেছে যে এই হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকারের এজেন্টরা জড়িত, তবে ভারত এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আরসিএমপি জানায়, গত কয়েক বছরে কানাডার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো একাধিক হত্যাকাণ্ড ও অপরাধমূলক সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও অভিযুক্ত করেছে। তারা আরও জানায় যে দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়, বিশেষ করে খালিস্তান আন্দোলনের সমর্থকদের বিরুদ্ধে অন্তত “ডজনখানেক বিশ্বাসযোগ্য ও আসন্ন হুমকি” চিহ্নিত করা হয়েছে।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরসিএমপি একটি বহুবিভাগীয় দল গঠন করে, যারা ভারতীয় এজেন্টদের জড়িত থাকার বিষয়ে তদন্ত ও সমন্বয় করে আসছে। আরসিএমপি জানায়, তারা ভারত সরকারের এজেন্টদের ব্যাপক অপরাধমূলক কার্যকলাপ এবং এর ফলে কানাডা ও সেখানকার জনগণের নিরাপত্তা বিপন্ন হওয়ার তথ্য পেয়েছে। এই তদন্তের ভিত্তিতে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইলেও তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
তদন্তে দেখা গেছে, কানাডায় ভারতীয় কূটনীতিক ও কনস্যুলার কর্মকর্তারা তাদের পদ ব্যবহার করে গোপন কার্যকলাপে লিপ্ত ছিলেন। তারা সরাসরি বা মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ভারত সরকারের জন্য তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। কিছু ব্যক্তি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে জোরপূর্বক বা হুমকি দিয়ে এই কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হয়েছিল বলে আরসিএমপি জানায়।
কানাডা পুলিশ জানিয়েছে, তারা ভারতীয় কর্মকর্তাদের কাছে প্রাপ্ত প্রমাণ সরাসরি উপস্থাপন করেছে এবং এই সহিংসতার অবসানে সহযোগিতা চেয়েছে। আরসিএমপি জনসাধারণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে কানাডিয়ানদের নিরাপত্তা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং কর্মকর্তাদের আলোচনার জন্য সময় দেওয়া প্রয়োজন।’
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয় এবং পাকিস্তানে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন কাশ্মীরপন্থী নেতার হত্যায় তাদের ভূমিকার অভিযোগ উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডাও বেশ কিছু হত্যার ষড়যন্ত্রে ভারতীয় এজেন্টদের ভূমিকা খুঁজে পেয়েছে।
কানাডা দাবি করেছে যে, ২০২৩ সালের ১৮ জুন খালিস্তানপন্থী নেতা হারদীপ সিং নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডে ভারতীয় এজেন্টরা জড়িত ছিল। নিজ্জার ১৯৯৭ সালে কানাডায় পাড়ি জমিয়ে ২০১৫ সালে কানাডিয়ান নাগরিকত্ব পান। তিনি পাঞ্জাব থেকে আলাদা খালিস্তান রাষ্ট্রের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন।
আরও জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তে গুরপতওয়ান্ত সিং পন্নুর-এর বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্রও উদঘাটিত হয়েছে, যা ভারতের একজন ‘জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা কর্মকর্তা’র নির্দেশে চালানো হয়েছিল। পন্নু যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারত সরকার এখনো তাকে হত্যার পরিকল্পনা করছে।
এই ঘটনাপ্রবাহ কানাডা ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ককে গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে, এবং ভবিষ্যতে এর কী পরিণতি হয় তা দেখার জন্য বিশ্ববাসী নজর রাখছে।