ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে জয়জয়কার আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের। কোনো প্যানেল না দিলেও ১৫টি পদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদকসহ ৯টি পদে জয়লাভ করেছেন তারা। বিএনপিপন্থী প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ৫জন। এর মধ্যে ৩ জন ভোটে জয় পেয়েছেন, ২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। জামায়াতের প্যানেল থেকে জয় পাননি কেউই। আর সভাপতি পদে জয় পাওয়া আইনজীবী বিএনপিপন্থী হলেও তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
দিনভর ভোট গ্রহণ ও গণনা শেষে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) রাত পৌনে ১২টার দিকে জেলা আইনজীবী সমিতির ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইসমাইল হোসেন। এতে সভাপতি পদে এ কে এম কামরুজ্জামান মামুন ও সাধারণ সম্পাদক পদে মোহাম্মদ মফিজুর রহমান বাবুল আবারও জয়ী হয়েছেন। আগের নির্বাচনেও তারা জয়ী হয়েছিলেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে জেলা আইনজীবী সমিতির ভবনে ভোট গ্রহণ করা হয়। নির্বাচনে ৬৮০ জন ভোটারের মধ্যে ৬৪৫ জন ভোট দেন।
নির্বাচনে ১৫টি পদে তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। বিএনপি ও জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা আলাদা আলাদা প্যানেল দেন। নির্বাচনে ১৫টি পদের মধ্যে বিএনপিপন্থী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ১০টি পদে এবং জামায়াতে ইসলামী ৮টি পদে প্রার্থী ঘোষণা করে।
দুজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জেতায় ভোট হয় ১৫টি পদের ১৩টিতে। আওয়ামী লীগ থেকে কোনো প্যানেল ঘোষণা করেনি। তবে নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদকসহ ৯টি পদে দলটির সমর্থিত আইনজীবীরা বিজয়ী হন। সভাপতি পদে ৩৩৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন এ কে এম কামরুজ্জামান।
তিনি বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্যানেলের মো. আবদুর রহমান পেয়েছেন ২৪৬ ভোট। অপর প্রার্থী কাজী আজিজুর রহমান পেয়েছেন ৫১ ভোট ও জামায়াতে ইসলামীর প্যানেলের প্রার্থী মোহাম্মদ সামসুল আরেফিন পেয়েছেন মাত্র ১১ ভোট।
সাধারণ সম্পাদক পদে ৩৭৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মফিজুর রহমান। গত নির্বাচনে তিনি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ থেকে অংশ নিয়ে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্রার্থী সামসুজ্জামান চৌধুরী পান ১৫৪ ভোট। জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী আবুল খায়ের পান ৯ ভোট।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি পদে মো. শামসুল হক, সম্পাদক তথ্য ও প্রযুক্তি পদে মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী ও ৪ নম্বর সদস্যপদে মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী জয় পেয়েছেন। এই ফোরাম থেকে সমাজকল্যাণ ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদে এ এইচ এম মনিরুজ্জামান এবং মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে জেসমিন আক্তার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এ ছাড়া সহসভাপতি পদে কাজী এখলাছুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-১ পদে আশরাফুল ইসলাম খান (চমন), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-২ পদে মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন, সম্পাদক পাঠাগার পদে জিল্লুর রহমান, অডিটর পদে রেজুয়ানুর রহমান, সদস্যপদে জহিরুল ইসলাম, শেখ সাজিদুর রহমান ও শাহ সুলতান নির্বাচিত হন। তারা সবাই আওয়ামী লীগ–সমর্থিত আইনজীবী।
সহকারী নির্বাচন কমিশনার আইনজীবী মো. নাসিরবলেন, নির্বাচনে ১৫টি পদের মধ্যে ১০টিতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ও ৮টি পদে জামায়াতে ইসলামীর প্যানেলের আইনজীবীরা অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে সভাপতি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী, পাঁচটি পদে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্যরা নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয়ী হয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীর কেউই কোনো পদে জয়লাভ করেননি।
জেলা আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে ভরাডুবির বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াত প্যানেলের পরাজিত সভাপতি প্রার্থী মোহাম্মদ সামসুল আরেফিন বলেন, একেকজন একেক ধরনের ভোট পেয়েছেন। তবে পরাজয়ের কারণ এই মুহূর্তে বলতে পারছেন না তিনি।
নির্বাচনের এমন ফলাফলের বিষয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘প্রথম কারণ আমাদের ভোটার কম। দ্বিতীয় কারণ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে বহিষ্কৃত ও নির্বাচনে জয়ী সভাপতি আওয়ামী লীগের আইনজীবীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তৃতীয় কারণ আমাদের দলের আইনজীবীরা আওয়ামী লীগের আইনজীবীদের পক্ষে কাজ করেছেন। এমন হলে টিকে থাকা কঠিন।’
পরিচ্ছন্ন ও ব্যক্তিগত ইমেজের কারণে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা ৯ পদে জয় পেয়েছেন বলে দাবি নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা মফিজুর রহমান বাবুল। তিনি বলেন, ‘ ৫ আগস্টের পর যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না এমন আইনজীবীদের বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। বিষয়টি আইনজীবীরা ভালোভাবে নেননি। বিএনপির মধ্যে বিভক্তিও ছিল আরেকটি কারণ।
তৃতীয়ত, সনদ জালিয়াতির অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য মাহবুবুল আলম চৌধুরীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আরেক ভিন্ন অভিযোগে তার সহোদর শফিউল আলমের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি আইনজীবীরা ভালোভাবে নিয়েছে।’