লেখাপড়া শেষ করে চাকরি পেলে বাবার সংসারের হাল ধরবেন ইমাম হাসান। নিয়তির নির্মম পরিহাস লেখাপড়া শেষ হলো পরিক্ষায় পাশ করেও ভাগ্যে জুটলনা চাকরি।
বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিন বার উত্তীর্ণ হলেও কোটা বৈষম্যের নির্মম স্বীকার হওয়ার কারণে আজও নিয়োগ বঞ্চিত জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা এক মেধাবী শিক্ষার্থী ডা. ইমাম হাসান। তাঁর মতো এরকম অনেকেই কোটা বৈষম্যের স্বীকার হয়েছেন।
একান্ত আলাপ কালে ডা. ইমাম হাসান জানান, শিক্ষক পিতার ইচ্ছাতেই চিকিৎসা বিদ্যায় লেখাপড়া। স্থানীয় ভাবে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করে রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়ে অ্যাপ্লাইড ফিজিক্সে ভর্তি হন।
পরে শিক্ষক পিতার একান্ত ইচ্ছাতেই ঢাকা পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হয়ে ২০০৭ সালে বিডিএস পাশ করেন ইমাম হাসান। বাবা খোদা বকস মন্ডল ও মা কহিনুর বানুর ২য় সন্তান ইমাম হাসানের ডেন্টাল পাশ করায় খুশির যেন শেষ নেই পরিবারে। ছেলে সরকারি ডাক্তার হয়ে সংসারের হাল ধরবে সুখেই কাটবে বাকী জীবন।
এ আশায় বাবা-মা বুক বাঁধলেও সে আশায় যেন গুড়ে বালি। ৩১, ৩৩ ও ৩৪ তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হলেও কোটা বৈষম্যের কারণে আজও চাকরি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন ইমাম হাসান।
এর মধ্যে হয়ত অনেকটা অভিমানে ২০২২ সালে পিতা শিক্ষক খোদা বকস মন্ডল পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান। ছেলের সরকারি চাকরি দেখার সৌভাগ্য হয়নি তাঁর । ষাটোর্ধ্ব বয়সের বৃদ্ধ মা কহিনুর বানু বলেন, ছেলের সরকারি চাকরি দেখা কি ভাগ্যে জুটবে!
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে তখন জয়পুরহাটেও ছাত্রদের সঙ্গে যোগ দেন ইমাম হাসান। ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এখন কোটা বৈষম্যের নির্মম স্বীকার হওয়া ব্যক্তিরা অন্তবর্তীকালীন সরকারের দিকে তাকিয়ে আশায় আশায় বুক বাঁধছেন। আবেদন করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের নিকট।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন দফতরেও আবেদন করা হয়েছে বলে জানান, ডা. ইমাম হাসান। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বাবা আমার চাকরি দেখে যেতে পারেনি। বৃদ্ধ মা কি আমার চাকরিটা দেখে যেতে পারবেন!