পারিবারিক পেনশনের জন্য তিন দিন ধরে ঘুরছেন আফরোজা বানু (ছদ্মনাম)। চাকরিরত অবস্থায় ছয় মাস আগে মারা যান তার স্বামী। অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসায় প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়েছে।
পেনশনের টাকাটা পেলে কোনোমতে দিন চলে যেত। কিন্তু কবে পাবেন তা কেউই বলতে পারছেন না। কারণ কাজটা করে দেওয়ার এমন কেউই এজি অফিসে নেই।
পেনশনারের লাম্পগ্রান্ট বিল, আনুতোষিকসহ জিপিএফের চূড়ান্ত পরিশোধের অনেক কাজই অডিটরের আইডি দিয়ে আইবাস সফটওয়্যারে এন্ট্রি করা হয়। মূলত কয়েক দিন ধরে অডিটররা আন্দোলনে থাকায় এ কাজগুলো বন্ধ রয়েছে।
একইরকমভাবে পে-ফিক্সেশন বন্ধ রাখায় ও শেষ বেতনের প্রত্যয়নপত্র বা এলপিসি না দিতে পারায় অনেকে বেতনও তুলতে পারছেন না। কারও জিপিএফ এন্ট্রি করা যাচ্ছে না, আনুষঙ্গিক বিল প্রদান,
আর্থিক অথরিটির পৃষ্ঠাঙ্কন, বিদেশের মিশনসমূহে রেমিট্যান্স পাঠানো— কোনো কাজই করা যাচ্ছে না। দেশের সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কোনো বিলই পাস হচ্ছে না। কার্যত বাংলাদেশের আর্থিক কার্যক্রম পুরো স্থবির হয়ে পড়েছে।
আজ মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স অফিসারের (সিএএফও) কার্যালয় ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
কয়েক দিন ধরে একই পদে দুই গ্রেডের বৈষম্যের কারণে অডিটর পদকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন দেশের নিরীক্ষা ও হিসাব বিভাগের অডিটররা।
তারা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন অফিস সময়ে এ অবস্থান কর্মসূচি চলবে। তবে উদ্ভুত এ পরিস্থিতি নিরসনের জন্য বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) অফিস এরই মধ্যে অর্থ বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে।
আন্দোলনরত অডিটররা জানিয়েছেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে অডিটরের পদকে ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণের নির্দেশনা প্রদান করা হলেও অর্থ মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর উক্ত রিট মামলার পক্ষভূক্ত ৬১ জন অডিটরের পদকে ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করে। এতে করে ৬১ জন অডিটর ব্যতীত বাকি দেশের ৬ হাজার ৯৮৫ জন অডিটর একই পদে দুই গ্রেডের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
সিএজি অফিসের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, অডিটরদের বিষয়ে সিএজি অফিস থেকে অর্থ বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে অর্থ বিভাগ কাজ করছে।
সিএজির ট্রেনিং একাডেমি ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট একাডেমির (ফিমা) একজন কর্মকর্তা জানান, দুই এক দিনের মধ্যে বিল পাস না হলে কয়েকটি জরুরি ট্রেনিং স্থগিত করা হতে পারে।
সম্প্রতি সিএজি অফিস থেকে ‘সিএজি কার্যালয় ও এর অধীনস্থ দপ্তরসমূহের অডিটর পদের বেতন গ্রেড-১১ হতে গ্রেড-১০ এ উন্নীতকরণ সংক্রান্ত’ একটি চিঠি অর্থ বিভাগের সচিব বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, সমগ্র দেশে নিরীক্ষা ও হিসাব বিভাগের কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অডিটর পদের বেতন গ্রেড-১১ হতে গ্রেড-১০ এ উন্নীতকরণের লক্ষ্যে বাস্তবায়ন আদেশ জারি না হওয়ায় বর্তমানে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নিরীক্ষা ও হিসাব বিভাগের সার্বিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে।
এমতাবস্থায়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনাপূর্বক সিএজি কার্যালয় ও এর অধীনস্থ দপ্তরসমূহের অডিটর পদের বেতন গ্রেড-১১ থেকে গ্রেড-১০ এ উন্নীতকরণের লক্ষ্যে বাস্তবায়ন আদেশ জারি করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদিষ্ট হয়ে পুনরায় বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।