20 C
Dhaka
Wednesday, November 27, 2024

‘বিজয় পেয়েছি, তাই হাত না থাকার কষ্ট মনে আনি না’

‘প্রতিজ্ঞা করে আন্দোলনে নেমেছিলাম। হয় মরবো, নয়তো বিজয় নিয়ে ঘরে ফিরবো। বিজয় পেয়েছি, তাই হাত না থাকার কষ্টটা মনে আনি না’—কথাগুলো বলছিলেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিতে ডান হাত হারানো যুবক আতিকুল ইসলাম আতিক।

১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার আগারগাঁও পঙ্গু হাসপাতালের তৃতীয় তলায় বি-৩৯ নম্বর বিছানায় বসে কথা হয় আতিকের সঙ্গে। জানালেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আজ রিলিজ দিয়েছেন তাকে। ১৯ বছরের এই তরুণের সঙ্গে কথা বলে যানা যায়, আন্দোলনে কিছু ভয়াবহ সময়ের কথা।

রাজধানীর উত্তরা আজমপুর পরিবারের সঙ্গে থাকেন আতিক। বাবা আলাল উদ্দিন পুরোনো ফার্নিচারের ব্যবসা করেন। মা আমেনা বেগম গৃহিণী। ছয় ভাইবোনের মধ্যে আতিকুল সবার ছোট।

উত্তরা আজমপুরে একটি মাকেটে বিক্রয় প্রতিনিধির কাজ করতেন। আন্দোলনের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের মৌন সমর্থন করে আসছিলেন আতিক। সুযোগ পেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে স্লোগান এবং মিছিলেও শামিল হয়েছেন বহুবার।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার দিনের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে আতিক বলেন, ৫ আগস্ট, উত্তর আজমপুরে বেলা ১১টা থেকে সবার সঙ্গে আমিও ছিলাম। গোলাগুলি শুরু হয় আনুমানিক বিকাল ৪টার দিকে। আমি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম প্রথম থেকেই। গুলি খাই ৫ আগস্ট। স্বৈরাচার সরকারের যখন পতন হয়েছে।

তখন ইন্ডিয়ান আর্মিদের উত্তরা থেকে এয়ারপোর্ট পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করতেই শুরু হয় গোলাগুলি। ওরা উত্তরা থানা থেকে বের হয়ে গুলি করতে করতে এয়ারপোর্টের দিকে আগাচ্ছিল। এছাড়া তারা তো পালাতে পারত না। তাই ওরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালাচ্ছিল। আন্দোলনের শেষ দিন ৫ আগস্ট ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ দিন বলে জানান আতিকুল।

সেই বিকালে আমাদের সামনেই কয়েক জন মারা যায়। আহত হয় আরো অনেক জন। আমরা রাস্তার এপার থেকে চলে যাই ওপারে। কারণ পুলিশ গুলি করছিল একে-৪৭ দিয়ে, চার জন ইন্ডিয়ান বিজিবি, ‘র। তাদের সহযোগিতা করছিল বাংলাদেশি দুজন পুলিশ। বাংলাদেশি পুলিশের এক জন একটা শটগান ইউজ করছিল, অন্যজন টিআর শেল মারছিল। আতিক বলেন, ইন্ডিয়ার বিজিবি আর ‘র, চেনার উপায় হলো—আমি ইন্ডিয়ান আর্মিদের পোশাকগুলোও চিনি এবং বাংলাদেশি ইনিফর্মগুলোও চিনি।

আমি আর একটা ভাই দাঁড়িয়ে ছিলাম। একটু দুরেই দেখি আমাদের এক ছাত্র ভাই পড়ে যাচ্ছে, আমি বুঝতে পারি ওর পায়ে গুলি লেগেছে, দৌড়ে গুলি লাগা ছেলেটার কাছে যাওয়ার আগেই আমাকেও গুলি করে দেয়। একে-৪৭ এর একটা গুলি এসে লাগে আমার ডান হাতে। ২-৪ সেকেন্ডের মতো আমি কিছু অনুভব করতে পারিনি।

তার পরেই দেখি আমার হাতটা ঝুলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে আমার হাতে কোনো হাড় নেই, শুধু চামড়ায় হাত ঝুলে আছে, ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। তখন বুঝতে পারি আমার হাতে গুলি লেগেছে। চিকিত্করা চেষ্টা করেছে হাত রাখতে, কিন্তু আমার হাতের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। পরে ১৪ তারিখ পঙ্গু হাসপাতালেই আমার হাত কেটে বাদ দেওয়া হয়।

আতিকুল বলেন, আগে আমি ছিলাম পূর্ণ মানুষ, তখর স্বপ্নগুলো ছিল অন্যরকম। কিন্তু এখন, এক হাতে নিয়ে কীভাবে কী করা যায়, সেটা ভাবতে হবে। আমি আগে শরীর ও মনে যেমন শক্ত ছিলাম, এখন তেমনটা নেই।

কারণ আমার ডান হাতটা চলে গেছে। মানসিকভাবে শক্তি নেই যে, সেটা বলব না। কারণ প্রতিজ্ঞা করেই মাঠে নেমেছিলাম। হয়তো মরবো, নয়তো বিজয় নিয়ে ঘরে ফিরব। কিন্তু মারা তো যাইনি। তবে এমন ভাবে বেঁচে আছি সেটা একরকম না বাঁচার মতোই।

সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ