27.2 C
Dhaka
Friday, July 25, 2025

বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে দাওয়াত না পেয়ে ছাত্রদলের হট্টগোল, অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি

রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে দাওয়াত না পাওয়ায় হট্টগোল করেছে শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। আজ সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) কলেজের শহীদ বরকত মিলনায়তনে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে।

পরে অধ্যক্ষের রুম থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার অর্ধশতাধিক বই এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের বিভিন্ন ছবি উদ্ধার হয়েছে দাবি করে তার পদত্যাগের দাবি জানান তারা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাংস্কৃতিক পর্ব শেষ হওয়ার পর খাবার বিতরণ পর্ব শুরু হওয়ার আগেই ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মিলনায়তনের সামনের গেটে এসে রাজনৈতিক স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর তারা দলবেঁধে মিলনায়তনের ভেতরে ঢুকে স্লোগান দেন।

ফলে খাবার বিতরণ পর্ব সফলভাবে শেষ করা সম্ভব হয়নি। তাদের হট্টগোলের কারণে অনেক শিক্ষক মিলনায়তন ত্যাগ করেন। এরপর ভিড় ঠেলে শিক্ষার্থীরাও মিলনায়তন ছেড়ে চলে যান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, কিছুক্ষণ পর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অধ্যক্ষের কার্যালয়ে গিয়ে অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের এক শিক্ষক বলেন, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে তাদের (ছাত্রদল) দাওয়াত না দেওয়ার কারণে তারা অধ্যক্ষের রুমে আসে। অধ্যক্ষের টেবিলের ওপর কোনো শেখ মুজিবের ছবি ছিল না। তবে তাদের কয়েকজন নেতাকর্মী রুমের পুরাতন আলমারি থেকে শেখ মুজিবের কিছু বই এবং বিগত সরকারের আমলের কিছু ছবি বের করে টেবিলের ওপর রাখে।

তিনি আরও বলেন, পুরাতন আলমারিগুলো কলেজের আর্কাইভ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যেখানে কলেজের পুরাতন সবকিছু সংরক্ষণ করে রাখা হয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, ক্যাম্পাস রাজনীতি মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল সব ধরনের রাজনৈতিক স্লোগান, মিছিল ইত্যাদি নিষিদ্ধ। তারপরও তারা এভাবে প্রতিনিয়ত স্লোগান, মিছিল, পোস্টারে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। শহীদ বরকত মিলনায়তনে যে ঘটনা ঘটেছে তার নিন্দা জানাই। যুক্তিসম্মত কোন ঘটনা ঘটলে পদত্যাগের দাবি শিক্ষার্থীরা জানাতে পারে, এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হস্তক্ষেপ দৃষ্টিকটু।

তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আরিফুর রহমান এমদাদ বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের রুম থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার অর্ধশতাধিক বই এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের বিভিন্ন ছবি উদ্ধার করে। আমাদের কলেজে একটি কর্মসূচি চলাকালে ঘটনাটি শুনে আমরাও অধ্যক্ষের রুমে গিয়ে ওইসব বই ও ছবি দেখতে পাই।

এতে স্পষ্ট হয় যে অধ্যক্ষ আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন। তার টেবিলে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচির ছবিও পাওয়া যায়। ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি জানায়।

শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন বলেন, আমরা ছোট ভাইদের মাধ্যমে জানতে পারি যে অধ্যক্ষের রুমে ২৪’র ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার বাবা শেখ মুজিবের বই এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ছবি পাওয়া গেছে। অথচ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, মাওলানা ভাসানী এবং শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হকসহ জাতীয় নেতাদের কোনো ছবি তার রুমে নেই।

তিনি আরও বলেন, যদি সে তার ভুলগুলো সংশোধন না করে, তাহলে আমরা তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিপ্রা রানী মন্ডল বলেন, আমার হারানোর কিছু নেই। আমি মেধার জোরে অধ্যক্ষ হয়েছি, কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে নয়। আমি কখনো কাউকে রাজনৈতিক সুবিধা দেইনি, ভবিষ্যতেও দেব না।

তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে ওদের অভিযোগ কী? সেটা স্পষ্ট করে বলুক। ওরা হইচই করতে করতে রুমে ঢুকেছে এবং কলেজের পুরাতন অ্যালবামগুলো বের করে আমার সামনে রেখে ছবি তুলেছে। আগের অধ্যক্ষ কী করেছেন, তার দায় আমি কেন নেব?

সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ