সনদে বয়স জালিয়াতি করে বিগত প্রায় ৩৭ বছর ধরে সাতক্ষীরার তালা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ‘ভি, এস ম্যাশন’ পদে চাকরি করছেন মীর আব্দুল গনি। তিনি তালা সদরের মৃত মীর নাছির উদ্দীনের পুত্র।
মীর আব্দুল গনির থেকে ছোট ভাই মীর রফিকুল ইসলামের থেকে বয়স ১৫ বছরের বড়। এদিকে ১৫ বছর বয়স নিয়ে দীর্ঘদিন প্রশাসনের নাকের ডগায় চাকুরি করে আসছেন তিনি।
এছাড়া মীর আব্দুল গনির বিরুদ্ধে জমি দখল, প্রতারণা, চুরি, নারী কেলেঙ্কারি, সুদের ব্যবসাসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলে জানাগেছে । সরকারী চাকুরি করার পরও গনির স্ত্রী ছা মে না খাতুনের নামে ৫০ শতাংশ খাসজমি বন্দোবস্ত নিয়ে সেটা বহাল তবিয়তে ভোগ দখল করে আসছেন।
এদিকে সংবাদ কর্মীরা তার অফিসে গিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার বয়স প্রায় ৭৪ বছর চলে।” অথচ ভুয়া জন্মতারিখ অনুযায়ী মীর আব্দুল গনির বয়স এখন ৫৮ বছর। বর্তমান তার জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্ম তারিখ উল্লেখ রয়েছে ১৫ জুন ১৯৬৬,অথচ তার ছোট ভাই মীর রফিকুল ইসলামের জন্ম ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৫১। ছোট ভাইয়ের চেয়ে মীর আব্দুল গনির বয়স প্রায় ১৫ বছর কম হয় কীভাবে এনিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। স্থানীয়রা বিষয়টি তদন্তপূর্বক অভিযুক্ত মীর আব্দুল গনির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের নিকট জোরালো দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৩৭ বছর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধদিপ্তরের ‘ভি,এস ম্যাশন’ পদে চাকরি করছেন মীর আব্দুল গনি। টানা ২৭ বছর তিনি নিজ উপজেলা সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় চাকুরি করেন। তালা সদরে বাড়ি হওয়ায় অধিকাংশ সময় তাকে অফিসে দেখা যায় না। অফিসের বস বাইরে ফিল্ডে যাবার সাথে সাথে সে বাড়িতে চলে যায়।
তাছাড়া এক সময়ের চরমপন্থি সদস্য তালা উপজেলার ডাংগানলতা গ্রামের মৃত তুফান খাঁর পুত্র একাধিক বিয়ের হোতা কফিল উদ্দীন খাঁর সাথে মিলে জমি প্রতারণা, দখল, সুদের ব্যবসা, জাল দলিল তৈরিসহ নানান অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। আব্দুল গনির স্ত্রীর সাথে পলাতক ঐ চরমপন্থি নেতা কফিল উদ্দীন খাঁ’র সখ্যতার কারণে এবং তার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এহেন কর্মকাণ্ড করে চলেছেন তিনি। দীর্ঘদিন ২৭/২৮ ধরে নিজ উপজেলায় কর্মরত থাকার সুবাদে মীর আব্দুল গনি অফিস ফাঁকিসহ নানান অপকর্ম করে চলছে।
মীর আব্দুল গনির প্রকৃত জন্ম তারিখ ১৯৫০ সালের দিকে হবে বলে জানান স্থানীয় প্রবীণরা। তারচেয়ে বয়সে তো অনেকেই চাকুরি থেকে অবসরে গেছেন। বিশেষ করে এক সময় তার ছাত্র কাজী নজরুল বারি (মনি কাজী) ৩/৪ বছর আগে চাকুরি থেকে অবসরে গেলেও এখনও বহাল তবিয়তে চাকুরি করছেন আব্দুল গনি।
শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন চাকুরির সুবাদে মীর আব্দুল গনি খুলনা সদর, কয়রা, বটিয়াঘাটা, তেরখাদা উপজেলায় একাধিক নারী কেলেঙ্কারির সাথে জড়িয়ে পড়েন। এসব ঘটনায় তার বেশ কিছুদিন অফিসে যাওয়া বন্ধ ছিল বলে তার সাবেক সহকর্মীরা জানান। এছাড়া রিং-স্লাব তৈরির সময় বিভিন্ন অফিস হতে রিং, সিমেন্ট, বালি-খোয়া, মাটিয়া তেল চুরি করে বিক্রি করা ছিল তার নিত্যদিনের ঘটনা। চুরি ও নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় তিনি একাধিকবার চাকুরি থেকে সাসপেন্ড হন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রটি জানায়, বিগত ৩৭ বছর পূর্বে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে ও তথ্য গোপন করে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেছিলেন মীর আব্দুল গনি। এছাড়া সরকারী চাকুরিজীবী হয়েও তালা সদর ইউনিয়নের জেয়াল নলতা মৌজায় তার স্ত্রী ছামেনা খাতুনের নামে ৫০ শতাংশ খাসজমি বন্দোবস্ত নিয়ে সেটি ভোগ দখল করে আসছেন আব্দুল গনি। এসব ঘটনা তদন্তপূর্বক অভিযুক্ত মীর আব্দুল গনির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের নিকট জোরালো দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
তালা থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মীর আব্দুল গনি মহল্লাপাড়ায় এক মালিকের কাছ থেকে ঘরভাড়ার চুক্তিপত্র শেষ হবার পরও সেখান থেকে নামছিল না। পরে মালিক পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে উনি চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত সময় চেয়ে নিয়ে আরেকটি ননজুুডিশিয়াল স্টাম্পে স্বাক্ষর করে সময় চেয়ে নেন।
এদিকে মীর আব্দুল গনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমার বয়স প্রায় ৭৪ বছর চলে।” তবে এখনও তিনি কীভাবে চাকুরি করছেন সে প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পারেননি। আর অন্যান্য অভিযোগের ব্যাপারে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
তালা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী কৌশিক রায় জানান, এ ব্যাপারে তিনি অবগত নন। তবে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে।