নওগাঁ হাঁপানিয়া স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম অবরুদ্ধ অবস্থায় বুধবার (২৮ আগষ্ট) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ হওয়ার পর ওই অধ্যক্ষকে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে (রামেক) নেওয়া হয়।
শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে হাঁপানিয়া স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে গত রোববার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছিলেন।
আজ সকাল ১০টার অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসলে শিক্ষার্থীরা তাঁকে তাঁর কক্ষে অবরুদ্ধে করে রাখেন। অবরুদ্ধ অবস্থায় বিকেল ৩টার দিকে অধ্যক্ষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান।
পরে তাঁকে ২৫০ বিশিষ্ট নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বিকেল ৪টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক কাকলী হক বলেন, ‘আজ বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জ্ঞান হারানো অবস্থায় একজন শিক্ষককে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর উনার জ্ঞান ফিরে আসে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে উনি স্ট্রোক করেছিলেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে রাজশাহীতে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
অধ্যক্ষ নুরুল ইসলামের বড় ভাই আবু নাছের আহম্মেদ বলেন, ‘নুরুল ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে গত রোববার থেকে তাঁর প্রতিষ্ঠানের কতিপয় শিক্ষার্থী ও বহিরাগত লোকজন আন্দোলন করছিল। এনিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম রবীন শিষ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, শিক্ষক ও অধ্যক্ষকে নিয়ে সভা করেন এবং উভয়পক্ষের মধ্যে মিমাংসা করে দেন।
আজ সকালে নুরুল ইসলাম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গেলে কিছু শিক্ষার্থী তাঁকে বিগত সময়ের কিছু বুঝে দিতে বলেন। নুরুল ইসলাম তাঁর হিসাব-নিকাশ বুঝে দেওয়ার এক পর্যায়ে দুপুর ২টার দিকে বহিরাগত কিছু লোকজন তাঁর কার্যালয়ে ঢুকে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও তাঁর শরীরে হাত দিয়ে টানাহেঁচড়া করতে থাকে। এভাবে প্রায় এক ঘন্টা ধরে তাঁকে নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে নুরুল ইসলাম সেখানে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও হাঁপানিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এস এম রবীন শিষ বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে কলেজের অধ্যক্ষকে নিয়ে একটা অস্থিরতা চলছিল।
বিষয়টি মঙ্গলবার উভয়পক্ষের সঙ্গে আমি সভাও করেছি। উভয়পক্ষের মধ্যে একটা সমঝোতার মধ্যে দিয়ে সভাটি শেষ হয়। কিন্তু আজকে আবারও অস্থিরতা দেখা দেয়। আন্দোলনকারী কয়েকজন শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে চলমান অস্থিরতা বন্ধ করতে বৃহস্পতিবার বিকালে একটি সভা আহ্বান ডেকেছি। সেখানে উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।’
কারা এই আন্দোলন করছে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নওগাঁর অন্যতম সমন্বয়ক তানজিম বিন বারী গণমাধ্যমক বলেন, ‘হাঁপানিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবিতে আমাদের কোনও শিক্ষার্থী আন্দোলন করছে কিনা, তা আমার জানা নেই।
কারা করছে, আমি জানি না। এ বিষয়ে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। হয়তো আমাদের ব্যানারে অন্য কেউ আন্দোলন করছে।’