প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ‘প্রাইমারি এডুকেশন সেক্টরে আমরা অনেক ভালো ভালো শিক্ষক পাচ্ছি। তাদের সুন্দরভাবে ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে।
সরকারি নানা উদ্যোগ তাদের জন্য আছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শ্রেণিকক্ষে আমরা সেটার ফলাফল পাচ্ছি না। তাহলে এত যে ভালো, মেধাবী লোকজন প্রাইমারি লেভেলে শিক্ষকতা পেশায় আসছেন, তারা কী শুধু কর্মসংস্থানের অভাবে আসছেন কি না, এ আলোচনাটা চলে আসে।’
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকে শুধু অর্থমূল্যে বিবেচনা না করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। বেতন-ভাতায় না পোষালে শিক্ষকদের অন্য পেশায় চলে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে নগরীর চট্টগ্রামে প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) পরিদর্শনে গিয়ে এক মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
এর আগে তিনি সার্কিট হাউজের সভাকক্ষে মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ‘প্রাইমারি এডুকেশন সেক্টরে আমরা অনেক ভালো ভালো শিক্ষক পাচ্ছি। তাদের সুন্দরভাবে ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। সরকারি নানা উদ্যোগ তাদের জন্য আছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শ্রেণিকক্ষে আমরা সেটার ফলাফল পাচ্ছি না। তাহলে এত যে ভালো, মেধাবী লোকজন প্রাইমারি লেভেলে শিক্ষকতা পেশায় আসছেন, তারা কী শুধু কর্মসংস্থানের অভাবে আসছেন কি না, এ আলোচনাটা চলে আসে।’
‘এখানে একটা বিষয় হচ্ছে শিক্ষকদের বেতন-ভাতার বিষয়টা। এটা নিয়ে অসন্তুষ্টি আছে। আবার সহকারী শিক্ষক হিসেবে যিনি জয়েন করছেন, অনেকসময় দেখা যাচ্ছে তিনি এই পদ থেকেই অবসরে যাচ্ছেন। এটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। পদোন্নতি হবে না, বেতন-ভাতা বাড়বে না, এটা হতে পারে না। এখন এক্ষেত্রে বিগত সরকার কি করেছে? প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের চাকরিটাকে সেকেন্ড ক্লাস ঘোষণা করল। কিন্তু ফাঁকটা রেখে দিল কোথায়- তাদের গ্রেডটা বাড়ানো হলো না। ফলে তারা সেকেন্ড ক্লাস অনুযায়ী যে বেতন-ভাতা পেতেন সেটা থেকে তারা বঞ্চিত হলেন।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি একটা বিষয় বলতে চাই যে, ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের আগে তো প্রাইমারি স্কুলগুলো সরকারি ছিল না। সেগুলো তো স্থানীয়ভাবেই পরিচালিত হতো। তখন কিন্তু সমাজে এই প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদেরই একটা ইতিবাচক, সম্মানজনক অবস্থান ছিল। তখন কিন্তু শিক্ষকদের অনেকের এতটা অ্যাকাডেমিক যোগ্যতা ছিল না। এখন যারা শিক্ষকতায় আসছেন তারা অনেক অ্যাকাডেমিক যোগ্যতাসম্পন্ন। কিন্তু তারা সমাজে আগের মতো সেই সম্মানটা পাচ্ছেন না। সমাজে যদি সেই সম্মানটা ফিরিয়ে আনতে চাই, তাহলে আমাদের নিজেদের অবস্থান থেকেও কিছু করতে হবে।’
শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকতায় এসে আমি কী পেয়েছি, কী পাইনি সেটার জন্য আফসোস করে আমি আমার পেশায় ফাঁকি দিচ্ছি কিনা, ক্লাসে ফাঁকি দিচ্ছি কিনা, সেটা ভাবতে হবে। ফাঁকি দিয়ে কিন্তু কোনো মহৎ কাজ হয় না। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকের পদটার গুরুত্ব কিন্তু অনেকবেশি। অর্থমূল্যে এটার বিচার হবে না। কারণ, একটি শিশুর মানুষ হয়ে ওঠার প্রাথমিক পাঠটুকু সে পাচ্ছে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকের কাছ থেকে।’
‘আমি শিক্ষকদের বলব, যদি সমাজে আপনাদের জন্য যে শ্রদ্ধার আসন আছে, সেটা অটুট রাখতে হয় বা ফিরিয়ে আনতে হয়, তাহলে শিক্ষকতা পেশাকে অর্থমূল্যে বিবেচনা করা যাবে না। অবশ্যই আপনাদের আর্থিক উন্নয়নের জন্য সরকারের উদ্যোগ আছে। কিন্তু যারা মনে করবেন যে, না আমার তো পোষাচ্ছে না, খুব ভালো, তাহলে আপনি প্রাথমিকে থাকবেন না, অন্য পেশায় চলে যান। আপনি একটা বিষয় ভেবে দেখেন, ভালো ভালো স্কুলে ভর্তির জন্য প্রতিযোগিতা হয়। তাহলে সরকারি প্রাইমারি স্কুলে হয় না কেন? মানুষ ভাবে, সরকারি প্রাইমারি স্কুল– এখানে তো পড়ালেখা হয় না। সুতরাং নিজেদের সম্পর্কে মানুষের এ নেতিবাচক ভাবনাটা পাল্টানোর জন্য হলেও কাজ করা দরকার।’
জানুয়ারি মাসের মধ্যেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতভাগ শিক্ষার্থী নতুন বই হাতে পাবেন বলে জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জান রায় পোদ্দার।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুল হাকিম, বিভাগীয় পরিচালক আতাউর রহমান।
সভার পরে উপদেষ্টা নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের (চট্টগ্রাম জেলা) উদ্বোধন করেন। এ সময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ছিলেন।