ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) চোর সন্দেহে তোফাজ্জল নামে এক ভারসাম্যহীন যুবক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়েছে।
যদিও বিচারবহির্ভূত কোনো হত্যাকাণ্ডই কাম্য নয়। তবে এই বিচ্ছিন্ন দুই ঘটনায় আওয়ামী সুযোগ-সন্ধানী মিডিয়ার আস্ফালনে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেটিজেনরা।
তারা বলছেন, ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে পরিচিত গণমাধ্যমগুলি এই ইস্যুতে ফলাউ ভাবে সিরিজ নিউজ প্রকাশ করছে। এসব সংবাদ দেখলে বোঝা যায়, সদ্য গণঅভ্যুত্থানের নেপথ্যের নায়ক ছাত্রদের বিজয়কে খাটো করতে তাদের ঢালাওভাবে জড়িয়ে খবর নেতিবাচক খবর প্রকাশ করা হচ্ছে।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে মোবাইল চোর সন্দেহে তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে জানা গেছে।
সে ফজলুল হক মুসলিম হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জালাল আহমেদ। সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের চক্রান্ত স্পষ্ট হচ্ছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ঢাবির ঘটনায় একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, তোফাজ্জলকে মারধরের ঘটনায় ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে ছাত্রলীগ নেতা জালাল আহমেদ। তাকে স্টাম্প হাতে একটি ভিডিওতে নিহত তোফাজ্জলের পাশেও দেখা যায়।
এহেন পরিস্থিতিতে নেটিজেনরা বলছেন, পতিত স্বৈরাচারের দোসররা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঢুকে গণ অভ্যুত্থানের বিজয়কে খাটো করতে এবং ড. ইউনূস সরকারকে ব্যর্থ করতে তৎপর হচ্ছে।
আওয়ামী মিডিয়ার আস্ফালনে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে নেটিজেনরা বলছেন, ছাত্রদের বিজয় ও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে খাটো করতে এমনভাবে সংবাদ করা হচ্ছে যাতে মনে হচ্ছে দেশে এই ধরনের ঘটনা এই প্রথম ঘটেছে।
আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী শাসন আমলে নারকীয় অনেক ঘটনা ঘটলেও তখন তৎপর দেখা যায়নি এসব সংবাদ মাধ্যমকে। এখন তারা সুযোগ বুঝে জনগণের মাঝে ক্ষোভ উসকে দিচ্ছে।
সচেতন মহল বলছেন, দেশ সেরা দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে দিতে সুকৌশলে কাজ করছে ফ্যাসিবাদের দোসররা। মাঠের ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ হয়ে এখন তারা প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একই সাথে অনতিবিলম্বে মবজাস্টিস বন্ধ ও দায়ীদের বিচারের আওয়ায় আনার দাবি জানিয়েছেন নেটিজেনরা।
ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মুখে হাসিনা ভারতে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিলেও এক মুহূর্তের জন্যও বসে নেই ফ্যাসিবাদের দোসররা। নানা ছদ্মবেশে তারা অর্ন্তবর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল ও ব্যর্থ করতে একের পর এক ষড়যন্ত্র করেই চলেছে। কখনও আনসার রূপে কখনও গার্মেন্ট শ্রমিক রূপে প্রতিবিপ্লবের দুঃস্বপ্নে বিভোর তারা।
এদিকে গত কয়েকদিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, মাঠের ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ হয়ে পতিত স্বৈরাচার রূপ পাল্টে এবার অনলাইনে অভ্যুত্থানবিরোধী তৎপরতা জোরদার করেছে। ফেসবুকে নামে-বেনামে আইডি খুলে একের পর এক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডামূলক পোস্ট দেওয়া হচ্ছে।
এসব পোস্টের বিষয়বস্তু দেখলে খুব সহজেই বোঝা যায়, তাদের টার্গেট হচ্ছে জনগণের মাঝে ড. ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উসকে দেওয়া। বিভিন্ন ইস্যুতে উসকানি দিয়ে সহিংসতা ছড়িয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করায় তাদের মূল লক্ষ্য। আর অনলাইন প্রোপাগান্ডার বড় একটি অংশ পরিচালিত হচ্ছে ভারত থেকে। ফলে সাইবার প্রতিরোধ গড়ে তোলার দাবি উঠেছে সচেতন মহল থেকে।
ফেসবুক ব্যবহারকারী মোহাম্মদ সামির লিখেছেন, ছাত্রদের বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সব অপকর্মের মূলে অপরাজনীতি অথচ সবাই ঢালাওভাবে ছাত্রদের দোষ দিচ্ছে । কেউ বলছেনা অপরাজনীতি দূর করা হোক।
ছাত্রদের মধ্যে ফ্যাসিবাদের অনুপ্রবেশ নিয়ে খান সোহাগ লিখেছেন, বাহ! ছাত্রলীগ বাহ! ক্যাম্পাস ফ্যাসিস্ট নাম পরিবর্তন করে “সমন্বয়ক” হয়েছে, রূপ অপরিবর্তিত!! ছাত্রলীগের জালাল মিয়া এখন এফ এইচ হলের সমন্বয়ক।
মাহবুব আলম লিখেছেন, ছাত্রলীগ মানুষ হত্যা করায় বিগত পনেরো বছরে যথেষ্ট পারদর্শীতা দেখিয়ে এসেছে,তাদের দ্বারাই এমন নৃশংস হউয়া সম্ভব! তারা যে কারণে এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা অনেকটাই সফল! হাজার হাজার ছাত্র জনতা হত্যা নিয়ে মানুষের আলোচনা কিছুটা কমে গেছে, এখন শুধু এক তোফাজ্জল!
হামিদুল ইসলাম রানা লিখেছেন, আওয়ামী লীগ তার অঙ্গসংগঠনকে দিয়ে বিভিন্নভাবে সরকারকে একটা বেকাইদায় ফেলার চেষ্টা করবেই এবং তা করছে তাই এ সমস্ত ঘটনাকে কঠোরভাবে দমন করতে না পারলে এই সরকারের দেশ চালানো কঠিন হয়ে যাবে এবং আওয়ামী লীগ সেটাই চাচ্ছে।