24 C
Dhaka
Monday, November 25, 2024

আমরা মরতে চাই, দেখি কত লোক মারতে পারে: জিএম কাদের

‘দেশ ভালো নেই’ মন্তব্য করে ‘আন্দোলন, কর্মসূচি চলবে’ বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। দলীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা মরতে চাই, দেখি কত লোক মারতে পারে।

আগামীকাল শনিবার (২ নভেম্বর) জাতীয় পার্টি পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ করবে বলেও জানান তিনি। জি এম কাদের বলেন, আমরা মরতে এসেছি, আমরা মরতে চাই, কত মারবে তোমরা আমরা দেখতে চাই।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে ‘জাতীয় পার্টির অফিসে হামলা ও অগ্নিকাণ্ডের প্রতিবাদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

জিএম কাদের আরও বলেন, আল্লাহ আমাদের প্রটেকশন দিচ্ছেন বলে এখনো বেঁচে আছি, অন্য কারও প্রটেকশনে নয়। বিচারের জন্য যদি আল্লাহর সাহায্যের দিকে চেয়ে থাকতে হয় তাহলে দেশ কীভাবে চলবে। আমরা একদিনের ডেমোক্রেসি চাই না। সব সময়ের ডেমোক্রেসি চাই। আমরা চাই সরকার হবে- ‘অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল’।

তিনি বলেন, আমরা দেশের জনগণের পাশে ছিলাম, সবসময় থাকবো। আমার পরবর্তী প্রজন্ম এলেও জাতীয় পার্টি জনগণের পাশে থাকবে এবং একইভাবে এগিয়ে যাবে। আমাদের ওপর হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। আমাদের দুই তারিখের কর্মসূচি চলবে। আমাদের কর্মসূচি ও আন্দোলন সবই চলবে নিয়মতান্ত্রিক এবং অহিংসভাবে।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, দেশটা এখন ভালো অবস্থায় নেই। শেখ হাসিনা দেশটাকে যেভাবে বিভক্তি করেছিলেন এখন একইভাবে বিভক্তি করা হচ্ছে। এখন হাজার হাজার মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, উনারা যা বলে তা-ই সঠিক, বাকি সবাই ভুল। উনারা এখন বিচারকার্যেও গিয়ে বাধা দেয়। উনাদের ইচ্ছা হলো আমাদের অফিস ভেঙে দিয়ে গেল। কারও যদি ভুল হয় সেখানে ব্যবস্থা নেওয়ার অনেক উপায় আছে, তাই বলে তাকে ধ্বংস করে দেবেন, এটা কেমন হবে।

জিএম কাদের বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমরা সবসময় সমর্থন জানিয়েছি। তাদের পক্ষে সে সময় অনেক কথা বলেছি, বিবৃতি দিয়েছি। যে কারণে আমার অনেক ক্ষতিও হতে পারতো। কিন্তু এসব কিছুর পরোয়া আমরা করিনি। তারপরও আমাদের বিরুদ্ধে অন্যায় অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।

‘আমি এখন বলছি, জাতীয় পার্টি একটি জনগণের রাজনৈতিক দল। হয়তো সারাদেশে আমাদের অবস্থান কিছুটা কম আছে, তবুও আমরা টিকে আছি। চাপে গর্তে ঢুকে গেলেও বারবার জাতীয় পার্টি উঠে দাঁড়ায়, এটাই অনেকের সহ্য হয় না। যে কারণে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়। জাতীয় পার্টি সবসময় জনবান্ধব দল ছিল, এখনো আছে এবং আগামীতেও থাকবে।’

তিনি বলেন, এরশাদ সাহেবকে যতই অপবাদ দেওয়া হোক না কেন জনগণ তার পাশে ছিল। অনেকে বলে এরশাদ সাহেবকে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে নামানো হয়েছে, এটা একদমই ভুল কথা। উনি জনগণের ইচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়েছেন। তবে একানব্বই থেকে উনার (এরশাদ) এবং জাতীয় পার্টির ওপর নানা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

জিএম কাদের আরও বলেন, জাতীয় পার্টি কোনো সময় দলীয়করণ করেনি। জাতীয় পার্টি সবসময় বিভিন্ন দলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে। তবে একটি গোষ্ঠী জাতীয় পার্টির নামে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে নানা রকমের ষড়যন্ত্র করছে।

তিনি বলেন, সবাই বলে আমরা নাকি আওয়ামী লীগের দোসর। কিন্তু কীভাবে দোসর হলাম। আমরা শেখ হাসিনার কোনো ধরনের জনবিরোধী কাজের সঙ্গে ছিলাম না। আমরা বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের জনবিরোধী ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আওয়ামী লীগের দলীয়করণের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার ছিলাম।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, অনেকে বলেন ১৫ বছর অবৈধ শাসনামল ছিল। তবে আমরা বলি সেটি ছিল ১০ বছর, ২০১৪-২০২৪ পর্যন্ত সরকারকে আমরা অবৈধ শাসনামল হিসেবে দেখছি। ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত শাসন আমলকে অবৈধ বলা ঠিক নয়, তবে খারাপ শাসনামল বলতে পারেন।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালে সব দল শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তখন কি সব দল শেখ হাসিনার সরকারকে বৈধতা দেয়নি। এটা কি একা জাতীয় পার্টি দিয়েছিল।

জাপা চেয়ারম্যান আরও বলেন, যখন নির্বাচনে যেতে চাই না, তখন জোর করা হয়। কিন্তু যখন যেতে চাই, তখন বাধা আসে। জাতীয় পার্টি একটি রাজনৈতিক দল, আমাদের অধিকার আছে রাজনীতি করার, যে কোনো দলের সঙ্গে আমরা যেতে পারি।

‘কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতি এখন কেমন যেন হয়ে গেছে। আমরা মনে করেছিলাম ষড়যন্ত্র শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু এখন দেখছি দিন দিন তা বেড়েই চলছে। জনগণের ইচ্ছা প্রকাশ করতে দেওয়া হবে না, এটা কোন ধরনের দেশ।’

জিএম কাদের বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির শাসনামলে অনেক ভালো মন্ত্রী ছিল। তাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হতো। যথেষ্ট ভালো সম্পর্ক ছিল। জামায়াতেরও অনেক ভালো নেতামন্ত্রী ছিল। তাদের সঙ্গেও আমার ভালো সম্পর্ক ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন- জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল করিম, শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদের।

সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ